গেটসের অভিযোগ: মাস্কের সাহায্য বন্ধে মারা যাচ্ছে দরিদ্র শিশু

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১০ মে ২০২৫ ২২:০৬

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ব্যক্তিত্ব ও মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস অভিযোগ করেছেন, বিশ্বজুড়ে সহায়তা বন্ধ করে ‘দরিদ্র শিশুদের হত্যা করছেন’ ইলন মাস্ক। তবে তিনি বিশ্ব দারিদ্র্য মোকাবিলায় ২০৪৫ সালের মধ্যে সব মিলিয়ে আরও ২০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিল গেটস ২০৪৫ সালের মধ্যে তাঁর দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান হিসেবে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের তীব্র সমালোচনা করে অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সাহায্য বাজেট ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়ে মাস্ক ‘বিশ্বের দরিদ্রতম শিশুদের হত্যা’ করছেন।

৬৯ বছর বয়সী এই বিলিয়নিয়ার জানিয়েছেন, তিনি তাঁর সম্পদের প্রায় পুরোটাই দান করার পরিকল্পনা দ্রুততর করেছেন। পূর্বপরিকল্পনার চেয়ে কয়েক বছর আগেই ২০৪৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলা হবে। গেটস বলেছেন, এই অর্থ দিয়ে পোলিও ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগ নির্মূল করা, নারী ও শিশুদের প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু বন্ধ করা এবং বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য হ্রাস করার মতো বেশ কয়েকটি লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

বিল গেটসের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এল—যখন ট্রাম্প প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকার মারাত্মক রোগ ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক সাহায্য বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই কাটছাঁটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাস্ক। তিনি প্রকাশ্যে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টকে (ইউএসএআইডি) ‘উড চিপারে খাওয়ানোর’ কথা বলে গর্ব করেছেন। তাঁর ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির (ডিওজিই) তত্ত্বাবধানেই এই কাটছাঁট হচ্ছে। ইউএসএআইডি-এর প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ অর্থবছরে এই সংস্থা বিশ্বব্যাপী ৪৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে গেটস বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির বিশ্বের দরিদ্রতম শিশুদের হত্যা করার দৃশ্যটা মোটেই সুন্দর নয়।’ রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গেটস সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সরকারের তহবিল কমানোর কারণে আগামী ৪-৬ বছরের মধ্যে মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে কয়েক দশকের অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

গেটস রয়টার্সকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করবে...সম্পদের অভাবে আরও কয়েক মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হবে।’ দ্রুত ব্যয় করার পরিকল্পনার কারণে গেটস ফাউন্ডেশনের বার্ষিক বাজেট ২০২৬ সালের মধ্যে ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং এরপর প্রতি বছর প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার হবে। গেটস হোয়াইট হাউসকে সতর্ক করে বলেছেন, তাঁর ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারগুলোর তৈরি হওয়া শূন্যতা পূরণ করতে পারবে না।

তবে গেটস বৃহস্পতিবার বলেছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে সরকারগুলো আবারও শিশুদের বেঁচে থাকা নিয়ে আগ্রহী হবে বলে তিনি মনে করেন। টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও মাস্ক এবং গেটস একসময় অন্যদের সাহায্য করার জন্য ধনীদের অর্থ দান করার বিষয়ে একমত ছিলেন, তবে এরপর থেকে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার মতবিরোধ হয়েছে।

সম্প্রতি মাস্ককে তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে গেটস বলেন, সাহায্য ব্যয়ের ভবিষ্যৎ এখন কংগ্রেসের ওপর নির্ভর করছে। সাহায্য কমানো নিয়ে গেটসের একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে করা একটি টুইটের জবাবে মাস্ক তাঁর এক্সে বলেছেন, ‘গেটস একজন বিরাট মিথ্যাবাদী।’

গেটস বলেছেন, তাঁর ফাউন্ডেশনের প্রচুর সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সরকারি সহায়তা ছাড়া অগ্রগতি সম্ভব নয়। গেটস তাঁর ওয়েবসাইটে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘মানুষকে সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে এমন সম্পদ আমার কাছে ধরে রাখার চেয়ে জরুরি সমস্যা অনেক বেশি।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলো বিশ্বের দরিদ্রতম মানুষের পাশে দাঁড়ানো অব্যাহত রাখবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।’

আফ্রিকার কিছু সরকার সাহায্য কমানোর প্রতিক্রিয়ায় বাজেট পুনরায় বরাদ্দ করেছে বলে তিনি প্রশংসা করেছেন। তবে তিনি বলেন, উদাহরণস্বরূপ, তহবিল ছাড়া পোলিও নির্মূল করা সম্ভব হবে না। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের প্রায় ৯৯% ব্যয় করার পরেই ফাউন্ডেশনটি বন্ধ হয়ে যাবে।

গেটসের সম্পদের বর্তমান মূল্য প্রায় ১০৮ বিলিয়ন ডলার। তিনি আশা করেন, ২০৪৫ সালের মধ্যে ফাউন্ডেশনটি প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। চূড়ান্ত অঙ্ক বাজার এবং মুদ্রাস্ফীতির ওপর নির্ভর করবে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: