হুমকি সত্বেও টেক্সাসে মুসলিম আবাসন প্রকল্প সম্প্রসারণ পরিকল্পনা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২০ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৪৩

ছবি : সংগৃহীত ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে বসবাসকারী মুসলিমদের হুমকি দেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে সম্প্রতি ইমরান চৌধুরীর কাছে হুমকি দিয়ে ফোনকল আসার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যেই পূর্ব টেক্সাসের ইস্ট প্লানো এলাকার কাছে মুসলিমদের জন্য এক হাজার নতুন বাড়ি, একটি কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ ও ইসলামিক বেসরকারি স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন ইমরান চৌধুরী।

এক অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোনে ইমরানকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমি আপনাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এটি এখন পর্যন্ত একটি বিকল্প পথ।’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা টেক্সাসের রক্ষণশীল, শ্বেতাঙ্গ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতারাও ইমরানের এ পরিকল্পনাকে সাদরে গ্রহণ করতে পারছেন না। তাঁরা প্রকল্পের বৈধতা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন। ইমরান চৌধুরী বলছেন, ভুলভাল বুঝিয়ে এ চাপ তৈরি করা হচ্ছে।

ইমরান আরও বলেন, ‘অঙ্গরাজ্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত যত আইন আছে, তার সব কটিই আমরা মেনে চলার চেষ্টা করছি।’ তবে চলতি সপ্তাহে ইমরান চৌধুরীর প্রকল্পটির সাংবিধানিক বৈধতা আছে কি না, তা নিয়ে তদন্তের জন্য সিনেটর জন করনিন আহ্বান জানিয়েছেন।

ইস্ট প্লানো ইসলামিক সেন্টার বা এপিক নামে পরিচিত বিদ্যমান একটি বসতি এলাকাকে সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়েই ওই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সিনেটর জন করনিন মনে করেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে টেক্সাসের ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে।

টেক্সাসের গভর্নর ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ গ্রেগ অ্যাবট এ প্রকল্পটিকে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘স্পষ্ট করে বলছি, টেক্সাসে শরিয়াহ আইন চালু হতে দেওয়া হবে না। শরিয়াহ শহর গড়তে দেওয়া হবে না। এ প্রকল্পের আওতায় যে “নো গো জোনস” গড়তে চাওয়া হচ্ছে, তা-ও গড়তে দেওয়া হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রে যেসব অঙ্গরাজ্যে শরিয়াহ আইনবিরোধী বিল কার্যকর করা হয়েছে, তার একটি টেক্সাস। বিদ্বেষবিরোধী সংগঠন সাউদার্ন পভার্টি ল সেন্টার শরিয়াহ আইনবিরোধী বিলকে অতি ডানপন্থী ষড়যন্ত্রগুলোর একটি বলে অভিহিত করেছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আওতায় বিশ্বাস করা হয় যে শরিয়াহ নামে পরিচিত ইসলামি আইন আমেরিকান আইনি ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করছে। তবে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ও অন্য আইন বিশেষজ্ঞরা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তবে শুধু মুসলিমদের জন্য একটি শহরের পরিকল্পনা করার কথা অস্বীকার করেছেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘এটি সবার জন্য উন্মুক্ত, যে কেউ আমাদের পরিষেবা, কমিউনিটি সেন্টার ও স্কুল ব্যবহার করতে পারবে।’

এপিক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করে ক্যাপিটাল পার্টনার্স। ইমরান চৌধুরী এর প্রেসিডেন্ট। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘এমনকি আমরা কখনো শরিয়াহ নিয়ে আলোচনাও করিনি। এই প্রকল্প করার সর্বোত্তম উপায় কী, তা নিয়ে আমরা প্রথম দিন থেকেই আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। যেন আমরা সব অঙ্গরাজ্য আইন ও ফেডারেল আইন অনুসরণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি।’

উল্লখ্যৈ, প্রায় ২০ বছর আগে ডালাসের উত্তরে প্লানোতে এপিক ইসলামিক কমিউনিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্লানো বসতি এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। এখন সেখানে তাদের একটি নিজস্ব মসজিদ আছে। ইমান ইয়াসির কাধি সেখানে ইমামতি করেন।

কাধির জন্ম হিউস্টনে পাকিস্তান বংশোদ্ভূত মা-বাবার পরিবারে। তাঁর মতে, উষ্ণ আবহাওয়া, করের হার কম হওয়া ও খাবারদাবার ভালো হওয়ার কারণে মুসলিমরা টেক্সাসকে পছন্দ করে। কাধি বলেন, ‘মসজিদটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন থেকে অনেক মানুষ এখানে আসতে শুরু করেন। আমরা দেখলাম, জায়গাটি আমাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। মানুষ ক্রমেই বাড়তে থাকায় আমরা এটাকে সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি।’

ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ -এর হিসাব অনুসারে, টেক্সাসে ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার।
এপিকের বাসিন্দারা ২০ শতাংশ মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করে আবাসন প্রকল্পে বুকিং দিতে পারেন। এসব জমির দাম ৮০ হাজার ডলার থেকে শুরু করে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত। অনলাইনে পোস্ট করা মানচিত্রে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে দুই ডজনের বেশি প্লট বিক্রি হয়ে গেছে।

তবে কলিন কাউন্টিতে এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে অনেক মানুষকে এপিকের প্রকল্পের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা গেছে। আবাসন কোম্পানিটির আইনজীবী ড্যান কগডেল বলেছেন, সব ধরনের নেতিবাচক প্রচারের কারণে প্রকল্পের অনুমোদনের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাবে। কাধির মতে, গভর্নর অ্যাবট যে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন, তা দুঃখজনক।কাধি বলেছেন, ‘আমি তাঁদের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে চিন্তিত। আমার বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু তাঁরাই আমাদের আতঙ্কিত করছেন।’ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানান কাধি।

দুই সন্তানের মা ৩৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি নারী মৈত্রী রহমান এপিক নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব বাগাড়ম্বর দেখছি ও শুনছি, তা সত্য নয়। এ জন্যই আমরা বিনিয়োগের ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: