১ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ও স্নাতকের ভিসা বাতিল করলো যুক্তরাষ্ট্র

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ২২:২৮

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

বড় পরিসরে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বসবাসকারী শত শত বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন এমনটা করা হয়েছে, তা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই জানা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্রদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাথীদের তথ্যভান্ডার স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেমে (এসইভিআইএস) দেশটির ১৩০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ও সম্প্রতি স্নাতক সম্পন্নকারীদের ভিসা বা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধতা বাতিল করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি অঙ্গরাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ও দেশটিতে থাকার বৈধতা বাতিলের খবর সিএনএনকে নিশ্চিত করেছে। মিডল টেনেসি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র জিমি হার্ট জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ছয় শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এ পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানে না। শুধু জানে, শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণকারী ফেডারেল তথ্যভান্ডারে পরিবর্তন আনা হয়েছে।’ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার তাদের এ পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কোনো কারণ জানায়নি। শুধু অল্প কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, কেন তাদের শিক্ষার্থীদের ভিসা বা কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার এসইভিআইএসের অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়েছে, তা তারা জানে।

ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র এরিক হাওয়াল্ড বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ অজ্ঞাত অপরাধের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। অভিযোগের ধরন সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি।’

যাঁদের ভিসা বাতিল হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে কি না, নাকি তাঁরা পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবেন-তা এখনো স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসীবিরোধী অভিযানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তার মতো গুরুতর অভিযোগ থেকে শুরু করে অনেক বছরের পুরোনো ছোটখাটো অভিযোগে তাঁদের নিশানা করা হচ্ছে।

কেন অনেক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হলো, তার নির্দিষ্ট কোনো কারণ মার্কিন কর্মকর্তারা জানাননি। তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বারবার বলেছেন, বিক্ষোভে অংশ নেওয়াসহ কিছু আচরণ সহ্য করা হবে না। মার্কো রুবিও বলেন, ‘তাঁরা এখানে ক্লাস করতে এসেছেন। আন্দোলন করতে এখানে আসেননি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সিএনএনকে বলেছে, তাদের ১২ জন বর্তমান বা সদ্য স্নাতক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হুলিও ফ্রেঙ্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাতিলের নোটিশে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করায় তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।’

শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল বন্ধ এবং বাতিল হওয়া ভিসা পুনর্বহাল চেয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে নতুন একটি মামলা হয়েছে।
আটলান্টার নর্দার্ন জর্জিয়া আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ভারত, চীন, কলম্বিয়া, মেক্সিকো এবং জাপানের ১৩৩ বিদেশি শিক্ষার্থীর ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মামলার এক আইনজীবী সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

তবে শিক্ষার্থীরা যাতে বিপদে না পড়েন, সে জন্য ওই মামলায় তাঁদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে। মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের তিন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম এবং অভিবাসন ও শুল্ক বাস্তবায়ন সংস্থার (আইসিই) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আইসিই বেআইনিভাবে শিক্ষার্থীদের আইনি বৈধতা বাতিল করেছে, যা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা এবং সেখানে কর্মসংস্থানের সক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। তাঁদের আটক, গ্রেপ্তার ও বিতাড়নের ঝুঁকিতে ফেলেছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: