ভারতের ওপর পাল্টা ১০০% শুল্ক আরোপের সিদ্ধানত ট্রাম্পের

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১ এপ্রিল ২০২৫ ২১:৩৪

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফ’ বা মুক্তি দিবস শুল্ক পরিকল্পনা নিয়ে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট নিশ্চিত করেছেন যে, রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টাপাল্টি শুল্কের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের তালিকা উল্লেখ করে লেভিট বলেন, ‘অন্যায্য বাণিজ্য রীতিনীতি’ বন্ধ হওয়া দরকার।

এ সময় লেভিট জানান, ভারত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে রেখেছে। তাঁর ইঙ্গিত থেকে স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপের ক্ষেত্রে ভারতকে কোনো ছাড় দেবে না। অর্থাৎ, ভারতীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও এখন যুক্তরাষ্ট্র ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবে এবং এই বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প খুবই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এই ঘোষণা এমন এ সময়ে এল যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী ২ এপ্রিল পাল্টাপাল্টি শুল্কের ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লেভিট এই বিষয়ে বলেন, ‘বুধবারের (শুল্ক ঘোষণার) লক্ষ্য হলো—দেশভিত্তিক শুল্ক, তবে অবশ্যই সেক্টরভিত্তিক শুল্কও (আরোপ করা হবে)। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি এগুলো বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কখন তিনি সেই ঘোষণা করবেন, তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’ লেভিট আরও বলেন, ‘এখন পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, জাপান এবং কানাডার আরোপিত বিশাল শুল্কের তালিকা সংবলিত এক টুকরো কাগজ ধরে হোয়াইট হাউসের প্রেস মুখপাত্র বলেন, ‘যদি আপনারা আমাদের বিদ্যমান অন্যায় বাণিজ্য রীতিনীতি দেখেন—তাহলে দেখবেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকান দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। জাপানের আমেরিকান চালের ওপর ৭০০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। ভারতের আমেরিকান কৃষিপণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। কানাডার আমেরিকান মাখন এবং আমেরিকান পনিরের ওপর প্রায় ৩০০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।’

লেভিট আরও বলেন, ‘এর ফলে আমেরিকান পণ্য এই বাজারগুলোতে আমদানি করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং গত কয়েক দশকে অনেক আমেরিকান ব্যবসা এবং কাজ হারিয়েছেন।’

দেশগুলো প্রায়শই তাদের অর্থনীতির জন্য অত্যাবশ্যকীয় শিল্প বা খাতকে সুরক্ষার জন্য বিদেশি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে থাকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্কের লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের উচ্চ শুল্ক হারের সঙ্গে সংগতি রেখে শুল্ক ধার্য করা এবং অ-শুল্ক বাধাগুলোর ক্ষতিপূরণ করা যা রপ্তানিকে অসুবিধায় ফেলে। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তি দিয়েছে, শুল্কের এই পার্থক্য আমেরিকানদের প্রতি অন্যায় এবং এটি তাদের দেশীয় কোম্পানি ও শ্রমিকদের ক্ষতি করে।

লেভিট প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আমেরিকার বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘ঐতিহাসিক পরিবর্তন’ আনবে। তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, এই দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশকে ঠকিয়ে আসছে...এবং আমেরিকান শ্রমিকদের প্রতি তাদের অবজ্ঞা তারা বেশ স্পষ্টভাবেই দেখিয়েছে বলেই আমি মনে করি।’

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন সোমবার বিদেশি দেশগুলোর নীতি ও প্রবিধানের এক বিশাল তালিকা প্রকাশ করেছে। এসব নীতিকে দেশটি বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে গণ্য করে। প্রস্তাবিত পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের দুই দিন আগে এই তালিকা প্রকাশ করা হলো।

বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের বার্ষিক ন্যাশনাল ট্রেড এস্টিমেট রিপোর্ট অন ফরেন ট্রেড ব্যারিয়ার্সে বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর গড় ফলিত শুল্ক হার এবং কঠোর খাদ্য নিরাপত্তা বিধি থেকে শুরু করে নব্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা এবং সরকারি ক্রয়বিধি পর্যন্ত বিভিন্ন অ-শুল্ক বাধার তালিকা দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আধুনিক ইতিহাসে কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে বেশি বিস্তৃত এবং ক্ষতিকর বিদেশি বাণিজ্য বাধাগুলো উপলব্ধি করেননি যা আমেরিকান রপ্তানিকারকরা সম্মুখীন হন। তাঁর নেতৃত্বে, এই প্রশাসন এই অন্যায় এবং অ-পারস্পরিক রীতিনীতিগুলো সমাধানের জন্য পরিশ্রম করছে, ন্যায্যতা পুনরুদ্ধার করতে এবং বিশ্ব বাজারে কঠোর পরিশ্রমী আমেরিকান ব্যবসা ও শ্রমিকদের প্রথমে রাখতে সাহায্য করছে।’

তবে ৩৯৭ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক পরিকল্পনাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: