পুতিনের ওপর চটেছেন ট্রাম্প, দিলেন শুল্ক বাড়ানোর হুমকি

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৩১ মার্চ ২০২৫ ২২:৫৬

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ গতকাল রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, যদি তিনি মনে করেন যে, মস্কো ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে তাঁর প্রচেষ্টাকে বাধা দিচ্ছে, তাহলে রাশিয়ার তেলের ওপর ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্তরের শুল্ক আরোপ করবেন।

সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, গত সপ্তাহে পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সমালোচনা করার পর তিনি খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি আপসমূলক অবস্থান নিয়েছেন। এই বিষয়টি পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কারণ, তিনি মস্কোর তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। তবে পুতিন সম্পর্কে তাঁর এই কঠোর মন্তব্য যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তার ক্রমবর্ধমান হতাশারই প্রতিফলন।

ট্রাম্প বলেন, ‘যদি রাশিয়া এবং আমি ইউক্রেনের রক্তপাত বন্ধ করার বিষয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারি এবং যদি আমি মনে করি যে, এটি রাশিয়ার দোষ...তাহলে আমি রাশিয়ার থেকে আসা তেলেওপরপর, সব ধরনের তেলের ওপর দ্বিতীয় স্তরের শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর মানে হলো, যদি আপনি রাশিয়া থেকে তেল কেনেন, তাহলে আপনি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করতে পারবেন না। সব তেলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকবে, সব তেলের ওপর ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পয়েন্টের শুল্ক থাকবে।’

পরে সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প আবারও বলেন, তিনি পুতিনের ওপর হতাশ। তবে যোগ করেন, ‘আমি মনে করি, আমরা ধাপে ধাপে অগ্রগতি করছি।’ এ সময় ট্রাম্প জানান, তিনি এক মাসের মধ্যে এই নতুন বাণিজ্য ব্যবস্থা আরোপ করতে পারেন।


অবশ্য এই বিষয়ে মস্কো থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। রাশিয়া অসংখ্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধকে ‘অবৈধ’ এবং রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পশ্চিমের অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বলে অভিহিত করেছে।

ফ্লোরিডার পাম বিচে অবকাশ যাপনকালে এনবিসি নিউজকে ট্রাম্প জানান, তিনি এ সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করছেন। ক্রেমলিন গত সপ্তাহে ভিডিও ফুটেজে জানায়, গত কয়েক মাসে দুই নেতার দুটি জনসমক্ষে ঘোষিত টেলিফোন কথোপকথন ছাড়াও আরও বেশি যোগাযোগ থাকতে পারে।

ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধকে ‘হাস্যকর’ যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন এবং তা বন্ধের ওপর জোর দিয়েছেন। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর শুরু হওয়া এই যুদ্ধ বন্ধে তিনি সামান্যই অগ্রগতি লাভ করেছেন।

এদিকে, গত শুক্রবার পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অধীনে রাখা যেতে পারে যাতে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে। ট্রাম্প নিজেও ইউক্রেনে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরাচার’ বলে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, পুতিন জানেন তিনি (ট্রাম্প) তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। তবে ট্রাম্প যোগ করেছেন, তাঁর (পুতিনের) সঙ্গে তাঁর ‘খুব ভালো সম্পর্ক’ রয়েছে এবং ‘যদি তিনি (পুতিন) সঠিক কাজটি করেন তবে রাগ দ্রুত কমে যায়...।’

এর আগে, গত শনিবার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের আকস্মিকভাবে ফ্লোরিডা সফর করেন। স্টাবের দপ্তর রোববার জানিয়েছে, তিনি ট্রাম্পকে বলেছেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা দরকার এবং তিনি ২০ এপ্রিলের কথা উল্লেখ করেছেন। কারণ, সেদিন ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার ৩ মাস পূর্ণ হবে।

অপরদিকে, কর্মকর্তারা আলাদাভাবে কিয়েভকে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুক্তি মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এই চুক্তির সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে ইউক্রেনের সব প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে আয় পাবে। জেলেনস্কি বলেছেন, প্রস্তাব সম্পর্কে বিস্তারিত বলার আগে কিয়েভের আইনজীবীদের খসড়াটি পর্যালোচনা করা দরকার।

এই বিষয়ে, নিজের রাষ্ট্রীয় বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন জেলেনস্কি ‘বিরল মৃত্তিকা চুক্তি থেকে সরে আসার চেষ্টা করছেন...যদি তিনি চুক্তিটি পুনরায় আলোচনা করতে চান, তবে তাঁর বড় সমস্যা হবে।’ ট্রাম্প সাংবাদিকদের আরও বলেন, ইউক্রেন কখনই ন্যাটোর অংশ হবে না।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: