বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ব্লিংকেনকে ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৬ জুন ২০২৩ ০৬:১৫

 বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ব্লিংকেনকে ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ব্লিংকেনকে ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি

 

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে চিঠি দিয়েছেন ছয় কংগ্রেস সদস্য। চিঠিতে তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে অভিযোগ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এই পাঁচ কংগ্রেস সদস্য হলেন- উইলিয়াম আর কিটিং, জেমস পি ম্যাকগভার্ন, বারবারা লি, জিম কস্তা, দিনা টাইটাস ও জেমি রাসকিন। মঙ্গলবার (১৪ জুন) কংগ্রেসম্যান উইলিয়াম আর কিটিং এক টুইটবার্তায় চিঠিটি শেয়ার করেন। তাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির চলমান অবনতি নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানোর পর ব্লিনকেনকে লেখা এই চিঠি এলো।

ব্লিনকেনকে লেখা চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০০৪ সালে গঠিত বাংলাদেশ পুলিশের আধাসামরিক ইউনিট র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা অব্যাহত রাখার জন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য মার্কিন সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। মার্কিন কর্মকর্তাদের সুস্পষ্ট ও বারবার বিবৃতি ও পদক্ষেপ বাংলাদেশ সরকার তার মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা মেনে চলা নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে পারে। আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইতিমধ্যে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার এবং সহিংসতা হয়েছে, যা ফলাফলকে (নির্বাচনের) কলঙ্কিত করতে পারে এবং সামাজিক সংঘাতকে আরও গভীর করতে পারে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাব এবং এর বর্তমান ও সাবেক সাত জন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে আমরা স্বাগত জানাই। দুর্ভাগ্যবশত, এসব পদক্ষেপের পরও বাংলাদেশে দমন-পীড়ন বন্ধ হয়নি। মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকার' তাদের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০২২-এ র‍্যাব, গোয়েন্দা শাখা, ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক সংঘটিত ৩১টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ২১টি গুম, কারাগারে ৬৮টি মৃত্যু এবং সাংবাদিকদের ওপর ১৮৩টি হামলার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।

এসব নথিভুক্ত ঘটনা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অস্বীকার করে চলেছেন, "[দেশের] বিরুদ্ধে নেতিবাচক [প্রচারাভিযান] হিসাবে এই জাতীয় অনুসন্ধানগুলো হ্রাস করেছেন এবং এমনকি জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত এবং পদোন্নতি দিয়েছেন।

চিঠিতে ২০২১ সালের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশি সমাজের অনেককে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাক্ষী, নথিভুক্ত বা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকার সুশীল সমাজ সংগঠন, মানবাধিকার রক্ষাকারী, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার এবং তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ জোরদার করেছে। উদাহরণস্বরূপ, জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলো হয়রানির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের আত্মীয়কে কেবল নিখোঁজ করা হয়েছে এবং জোর করে গুম করা হয়নি বলে ফাঁকা কাগজপত্র বা পূর্ব-লিখিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে।

এছাড়া মানবাধিকার নথিপত্র ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে 'বিশ্বের কাছে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করার' অভিযোগে ২০২২ সালের জুনে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা বিষয়ক ব্যুরো কর্তৃক পূর্বে উল্লিখিত মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। অধিকারের নেতা, সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা ক্রমবর্ধমান নজরদারি, হয়রানি এবং জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন। এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও সুশীল সমাজ সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবার বাংলাদেশ সরকারকে জবাবদিহি করতে র‍্যাব ও অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার আরও সদস্যদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে আসছে।

বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে ৬ কংগ্রেস সদস্য বলেন, তারা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশের আগ্রহের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে ২০২৩ সালের সামিট অব ডেমোক্রেসিতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত একটি সুস্পষ্ট সংকেত যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার চ্যালেঞ্জকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

চিঠিতে কংগ্রেসের সদস্য উইলিয়াম আর কিটিং, জেমস পি ম্যাকগভার্ন, বারবারা লি, জিম কস্তা, ডিনা টাইটাস এবং জেমি রাসকিনও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্নও রেখেছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: