ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস। এর মধ্যেই সেখানে শুরু হয়েছে ব্যাপক লুটপাট। সেখানে লুটপাট থামাতে জারি করা হয়েছে কারফিউ।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লুটপাটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা উদ্ধারকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া দাবানল এলাকায় সর্বসাধারণের উপস্থিতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
যদি কেউ কারফিউ লঙ্ঘন করে বাইরে বের হয়, তাকে ১ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির কর্মকর্তারা।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম কড়া ভাষায় বলেন, ‘যারা বিপদগ্রস্ত সম্প্রদায়ের সুযোগ নিতে চাইছেন, তাদের স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, লুটপাট সহ্য করা হবে না।’
লস অ্যাঞ্জেলেসের নিউসমের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাজের গতি বাড়ানোর জন্য ন্যাশনাল গার্ডের কয়েক শ সদস্যকে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ পয়েন্টে ন্যাশনাল গার্ডের অতিরিক্ত সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির সুপারভাইজার ক্যাথরিন বার্গার গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দাবানলের সময় লুটপাটের অভিযোগে কাউন্টিতে কমপক্ষে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ ক্যাথরিন বার্গার লুটপাটকারীদের ‘সুযোগসন্ধানী’ অভিহিত করে বলেন, ‘আমরা এটি আর ঘটতে দেব না। আমরা চুপ করেও থাকব না। এই বেদনাদায়ক ঘটনা আরও জটিল হতে দেব না।’
এদিকে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়া দাবানলে এখনো পুড়ছে ছয়টি শহর। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ১০ জনে। ৫ হাজার ৩০০ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। পুড়ে গেছে ৩১ হাজার একরের বেশি জায়গা।
এরই মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে গেছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। উডল্যান্ড হিলসে নতুন করে আগুন ছড়িয়েছে। বাসিন্দাদের দেওয়া হয়েছে নিরাপদে যাওয়ার নির্দেশ।
বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া অঞ্চলটিতে ২৬২ দিন ধরে বৃষ্টি হয় না। শুষ্ক আবহাওয়াকেও দাবানল ছড়ানোর অন্যতম কারণ বলছে কর্তৃপক্ষ।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে ভয়াবহতম এই আগুনে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল বলে শুরুর দিকে জানিয়েছিলো আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার। বর্তমানে তা বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। ওয়েবসাইটটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগুনে এখন পর্যন্ত ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে শহরের হলিউড হিল এলাকার আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দাবানলের ভয়ে সেখান থেকে সরে যাওয়া অনেক মানুষ নিজেদের বাড়িতে ফিরছেন। অভিজাত প্যাসিফিক প্যালিসেইডস এলাকায় পুড়ে ছাই হওয়া ঘরবাড়িগুলোতেও লোকজনকে ফিরতে দেখা গেছে। এমনই একজন বিলাল তুখি। তিনি বলেন, আগুনে পোড়া এলাকাটি তাঁকে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: