নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আসন্ন প্রশাসনে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে বেশ কিছু নারীকে মনোনীত করেছেন। ক্রিস্টি নোমকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি এবং এলিস স্টেফানিককে জাতিসংঘে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। লিন্ডা ম্যাকমাহনকে শিক্ষা সচিব এবং স্যুজি ওয়াইলসকে হোয়াইট হাউস চিফ অব স্টাফ হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ঘোষিত কয়েকজন নারী প্রার্থীর মধ্যে আরও রয়েছেন কারি লেক (ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে সম্ভাব্য প্রার্থী)। ফ্লোরিডার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নেয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের প্রথম ও সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদে নারী নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়। প্রথম মেয়াদে (২০১৬-২০২০ সালে) ট্রাম্পের ক্যাবিনেটে মোট ১৫ মন্ত্রীর মধ্যে মাত্র ৩ জন নারী ছিলেন। ইলেন চাও (পরিবহন সচিব), বেটসি ডেভোস (শিক্ষা সচিব), এবং কিরস্টেন নিলসেন (হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব) দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও নিকি হ্যালি জাতিসংঘে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত এবং লিন্ডা ম্যাকমোহন ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে এই দুই পদ সবসময় ক্যাবিনেট-স্তর বা মন্ত্রীপর্যায়ের নয়।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের মোট নিয়োগের মাত্র ১২.৫ শতাংশ নারী ছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে কম বলা যায়।তবে বর্তমানে ট্রাম্পের সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদে নারী নিয়োগের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এটি নির্দেশ করে যে দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পকে ঘিরে উচ্চপদে নারীদের অংশগ্রহণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। তবে এসব মনোনয়ন এখনও চূড়ান্ত নয় তাই বাস্তবায়ন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই মেয়াদে পুরুষ প্রার্থীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে নারীদের চেয়ে বেশি।
নির্বাচিত পুরুষদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদে রয়েছেন রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র (স্বাস্থ্য সচিব) এবং লি জেলডিন (পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা প্রশাসক)। এর পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসনের আরও গুরুত্বপূর্ণ পদের তালিকায় পুরুষদের আধিপত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ট্রাম্পের মনোনীত নির্বাচিতদের মধ্যে অধিকাংশ যদি নারী হন, তবে এটি সমাজ ও প্রশাসনের জন্য ইতিবাচক বা নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এর প্রকৃত প্রভাব নির্ভর করে নির্বাচিতদের ব্যাক্তিগত যোগ্যতা, প্রশাসনিক দক্ষতা, এবং সামাজিক কাঠামোতে তাদের অবস্থানের ওপর।
ইতিবাচক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে লিঙ্গ সমতার অগ্রগতি। রাষ্ট্রীয় পদে নারীদের নিয়োগ লিঙ্গ সমতা অর্জনের পথে বড় পদক্ষেপ। এটি আমেরিকান সমাজে নারীদের ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল বার্তা দেয় এবং ভবিষ্যতে আরও নারীদের নেতৃত্বে আসার অনুপ্রেরণা জোগায়।
এমন উদ্যোগের ফলে নারীরা প্রশাসনে নতুন ও ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও সামাজিক নীতি-নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা আরও বেশি সহানুভূতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।
নারীদের সংখ্যা বাড়ার মাধ্যমে প্রশাসনে তাদের প্রতিনিধিত্ব আরও ভারসাম্যমূলক হতে পারে, যা সমাজের নানা শ্রেণি ও গোষ্ঠীর জন্য ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসতে পারে।বেশি সংখ্যক নারীদের নেতৃত্বে আনায় একটি আধুনিক ও উদার মনোভাবসম্পন্ন রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি তৈরি হতে পারে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক।
সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবের মধ্য অন্যতম হচ্ছে ব্যাক্তিগত যোগ্যতার প্রশ্ন। যদি মনোনীত নারীরা সুযোগ্য না হন, তবে এটি প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। মনোনয়নের ক্ষেত্রে লিঙ্গ নয়, বরং যোগ্যতাই সবার আগে বিবেচ্য হওয়া উচিত।
যদি এই নিয়োগগুলো শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য হয়ে থাকে তবে এটি প্রশাসনের গুণগত মান কমিয়ে আনতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে নীতিনির্ধারণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কিছু রক্ষণশীল বা পুরুষতান্ত্রিক গোষ্ঠী নারীদের আধিপত্যকে হুমকি হিসেবে দেখতে পারে এবং এর ফলে সামাজিক বা রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। যদি নারীদের নিয়োগ শুধুমাত্র প্রতীকী, লোক-দেখানো (টোকেনিজম) হয়ে থাকে তবে এর মাধ্যমে সত্যিকারের ক্ষমতায়ন না হয়ে বরং সমাজে নেতিবাচক বার্তা ছড়াতে পারে।
উচ্চপদে নারীদের আধিক্য যদি লিঙ্গবৈষম্য দূর করে সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তবে এটি একটি সফল উদ্যোগ হতে পারে। তবে যদি যোগ্যতার বদলে শুধুমাত্র লিঙ্গকে গুরুত্ব দেয়া হয়, তবে এর ফলে প্রশাসনে অদক্ষতা দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে সমালোচনা তীব্র হওয়ার পাশাপাশি হিতে-বিপরীত হবার শঙ্কা রয়েছে।
তবে অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, অতি মাত্রায় নারীদের নিয়োগের বিষয়টি নেতিবাচক না হয়ে বরং ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে তা না হলে ট্রাম্পের হঠকারিতা ফের স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যোগ্য ও দক্ষতাসম্পন্নদের মনোনয়ন নিশ্চিত করা গেলে, এটি নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি প্রশাসনিক দক্ষতাও বাড়াতে পারবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: