যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের হাতে গোনা কয়েকদিন বাকি রয়েছে। দেশটির ভোটাররা আগামী ৫ নভেম্বর তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দেবেন।
২০২০ সালে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন জো বাইডেন। তিনি এবারও নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু গত জুলাইয়ে প্রচারণার শেষে এসে তিনি সরে দাঁড়ান ও কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন।
এখন বড় প্রশ্ন হলো—এবার যুক্তরাষ্ট্র তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট পাবে নাকি দ্বিতীয় মেয়াদে জয় পেয়ে ক্ষমতায় বসবে ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যেহেতু নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। ভোটারদেরও এই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। হোয়াইট হাউজে যাওয়ার দৌড়ে কে এগিয়ে সে সব বিষয়ে নজর রয়েছে সবার। তবে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটারদের মনের নানা শংঙ্কা ও উদ্বিগ্নতা ততই বেড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এক জরিপে উঠে এসেছে নির্বাচনে ভোটারদের এমন কিছু হতাশার চিত্র।
ওই জরিপে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যিনিই জয়ী হোক, তাতে গণতন্ত্রই দুর্বল হবে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক ভোটার। তারা দেশটির রাজনৈতিক সহিংসতা, নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা এবং গণতন্ত্রের জন্য বৃহত্তর প্রভাব সম্পর্কে বেশ শঙ্কিত। এই শঙ্কার মধ্যে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন আমেরিকার প্রায় অর্ধেক ভোটার।
ভারতীয় এক খবরে বলা হয়েছে, দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপের ফল অনুযায়ী, নিবন্ধিত ভোটারদের ৪০ শতাংশ বলেছেন যে, তারা নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার সহিংস প্রচেষ্টার বিষয়ে ‘অত্যন্ত’ বা ‘খুব’ উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগের পেছনের কারণ হচ্ছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি। ক্রমাগতভাবে ট্রাম্প দাবি করছেন যে, কেবল জালিয়াতি হলেই তিনি নির্বাচনে পরাজিত হবেন।
নিবন্ধিত ভোটারদের প্রায় ৯০ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে, প্রতিটি রাজ্যে ভোট গণনার পর বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল হেরে মেনে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ভোটার মনে করেন যে, ফল স্বীকার করে নেবেন ট্রাম্প।
রিপাবলিকান ভোটারদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মনে করেন, ট্রাম্প স্বীকার (পরাজয়) করবেন; তবে এ বিষয়ে ডেমোক্রেটদের প্রতি ১০ জনে মাত্র ১ জন রিপাবলিকানদের সমর্থন করেছে। বিপরীতভাবে, ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৮ জন ভোটার (যার মধ্যে রিপাবলিকানও রয়েছে) বিশ্বাস করেন যে, কমালা হ্যারিস ফল মেনে নেবেন এবং হেরে গেলে তা স্বীকার করবেন।
গণতন্ত্রের প্রশ্নে, ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানরা তাদের মতামত নিয়ে বিভক্ত। প্রায় অর্ধেক ভোটার বিশ্বাস করেন যে, ট্রাম্প গণতন্ত্রকে ‘অনেক’ বা ‘কিছুটা’ দুর্বল করে দেবেন। অন্যদিকে ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের ক্ষেত্রেও ৪০ শতাংশ ভোটার একই মন্তব্য করেছেন।
এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, একটি গভীর মতাদর্শগত ব্যবধান বিভক্ত হয়ে পড়েছে আমেরিকানরা। এই বিভক্তির একটি কারণ হচ্ছে ক্যাপিটলে ৬ই জানুয়ারির হামলা, যার জন্য ট্রাম্পকেই ‘অনেক বেশি’ বা ‘কিছুটা’ দায়ী করে ডেমোক্রেট এবং স্বতন্ত্ররা।
৬ জানুয়ারির হামলা ছাড়াও আরও অনেক প্যারামিটার রয়েছে যার ভিত্তিতে আমেরিকানরা মতাদর্শিক সংঘর্ষে জড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর একটি কারণ হচ্ছে জনপ্রিয় ভোটের বিপরীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি ব্যবহার করা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতির মধ্যে এমন বিভক্তি নির্বাচনের ব্যালট বাক্সের বাইরেও প্রতিফলিত হবে। আমেরিকান গণতন্ত্রের ভিন্ন রূপ বিশ্বজুড়ে অন্যরকম প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: