ফাইট ফাইট ফাইট বলে ঐক্যের ডাক ট্রাম্পের

ট্রাম্প হত্যাচেষ্টা : বিষাক্ত হতে পারে আমেরিকান রাজনীতি, প্রশ্নের মুখে সিক্রেট সার্ভিস

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৪:৩২

ফাইট ফাইট ফাইট বলে ঐক্যের ডাক ট্রাম্পের : সংগৃহীত ছবি ফাইট ফাইট ফাইট বলে ঐক্যের ডাক ট্রাম্পের : সংগৃহীত ছবি


যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতায় প্রায় প্রতিদিনই নিরস্ত্র মানুষের মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, বন্দুক সহিংসতা জিইয়ে রাখার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে রিপাবলিকান পার্টির। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নির্বাচনী প্রচারের সময় এ দলেরই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। এ ঘটনা নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। হামলার জন্য তাৎক্ষণিকভাবেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর দোষ চাপিয়েছেন রিপাবলিকান নেতারা। তবে বাইডেন এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় আমেরিকান রাজনীতি আরও বেশি বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৩ জুলাই শনিবার রাতে পেনসিলভানিয়ার বাটলারে নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গুলি তাঁর ডান কান ছুঁয়ে যায় এবং তিনি মঞ্চে বসে পড়েন। ওই মুহূর্তের ভিডিওতে দেখা যায়, গুলির শব্দে নিরাপত্তারক্ষীরা চারপাশ থেকে তাঁকে ঘিরে ধরেন। এর পর ট্রাম্প যখন আবার উঠে দাঁড়ান, তাঁর কান থেকে গালের পাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। 

আহত অবস্থায় উঠে দাঁড়িয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশে ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় তিনি বলছিলেন, ‘ফাইট! ফাইট! ফাইট।’

ওই সমাবেশে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, গুলির শব্দ পাওয়ার আগে তিনি কাছের একটি ভবনের ছাদে এক রাইফেলধারীকে হামাগুড়ি দিতে দেখেছেন। ওই হামলাকারীর গুলিতে সমাবেশে আসা এক রিপাবলিকান সমর্থকের প্রাণ গেছে, গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দু’জন। পরে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার গুলিতে ওই পুরুষ আততায়ী নিহত হয়েছেন।

সিক্রেট সার্ভিস বলেছে, এ ঘটনাকে ‘হত্যাচেষ্টা’ বিবেচনা করেই তারা তদন্ত শুরু করেছে।

ঘটনার পর পরই ট্রাম্পকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত এবং ভালো আছেন বলে তাঁর প্রচারশিবির জানিয়েছে।

বিবিসি জানায়, ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প বক্তৃতা শুরু করার পরপরই গুলির শব্দ পাওয়া যায়। তিনি হাত দিয়ে ডান কান স্পর্শ করেন এবং রক্তে ভেজা হাত দেখে পডিয়ামের পেছনে হাঁটুর ওপর বসে পড়েন। সিক্রেট সার্ভিসের লোকজন এ সময় চারপাশ থেকে তাঁকে ঘিরে ধরেন। মিনিটখানেক পর ট্রাম্প যখন উঠে দাঁড়ান, তাঁর মাথার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ লেখা লাল রঙের টুপি আর জায়গামতো নেই। সিক্রেট সার্ভিসের লোকজন ঘিরে ধরে গাড়িতে তোলার সময়ও ট্রাম্প বলছিলেন, ‘দাঁড়াও, দাঁড়াও।’ পরে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমাকে গুলি করা হয়েছে। গুলি আমার ডান কানের ওপরের অংশ চিড়ে দিয়ে গেছে। অনেক রক্ত ঝরেছে।’ পরে ভিডিওতে দেখা যায়, গুলি তাঁর মাথার পাশ দিয়ে চলে গেছে।

ট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে এফবিআই। গুলিবর্ষণকারীর নাম টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। তাঁর বয়স ২০ বছর বলে রোববার বিবৃতিতে জানিয়েছে এফবিআই। ঘটনার সময় ট্রাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের গুলিতে বন্দুকধারী নিহত হন।

ভোটার রেকর্ড অনুযায়ী তিনি একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান ছিলেন। তবে তিন বছর আগে তিনি বাইডেনশিবিরকে ১৫ ডলার অনুদান দিয়েছিলেন। হত্যাচেষ্টার মোটিভ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের দ্বৈরথের মাত্র চার মাস আগে এই গুলির ঘটনা ঘটল। সব জনমত জরিপেই নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দুই দলের শীর্ষ নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের প্রচারশিবির জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আজ সোমবার রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে যোগ দেবেন। ওই সম্মেলনে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।

রোববার ট্রাম্প বিবৃতিতে বলেছেন, ‘একমাত্র ঈশ্বর অকল্পনীয় ঘটনা ঘটতে বাধা দিয়েছিলেন। আমরা ভয় পাব না বরং আমাদের বিশ্বাসে স্থিতিশীল থাকব এবং অশিষ্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী থাকব। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।’

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিবৃতিতে বলেছেন, এ ধরনের সহিংসতার কোনো জায়গা আমেরিকায় হবে না। সমগ্র জাতির এক হয়ে এ ঘটনার নিন্দা জানানো উচিত। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন, গুলিতে আহত ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন বাইডেন।

প্রশ্নের মুখে সিক্রেট সার্ভিস

ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় আপাতদৃষ্টিতে নিরাপত্তার গাফিলতিই বড় কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের দিকে আঙুল তুলছেন অনেকে, প্রশ্ন উঠছে তাদের দায়িত্ব নিয়ে। তবে ট্রাম্প নিজে সিক্রেট সার্ভিস ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে গুলির ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সিক্রেট সার্ভিসের কাজ যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে ট্রাম্পের ওপর হামলাকে সিক্রেট সার্ভিসের ‘পুরোপুরি ব্যর্থতা’ অভিহিত করে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। আমেরিকান প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান মাইক জনসন বলেছেন, প্রতিনিধি পরিষদ এ হামলার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবে।

এ হামলার বিষয়ে প্রতিনিধি পরিষদের ওভারসাইট কমিটি বাহিনীর পরিচালক কিম্বারলি চিটলকে তলব করেছে। সিক্রেট সার্ভিস বলেছে, সমাবেশের নিরাপত্তার জন্য যে এলাকা ঘিরে তারা নিরাপত্তার আয়োজন সাজিয়েছিল, গুলি হয়েছে তার বাইরে থেকে। আততায়ী মঞ্চের ডান দিকে একটি একতলা ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা।
বাইডেনকে দুষছেন রিপাবলিকানরা

ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে দুষছেন রিপাবলিকান পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারা। রিপাবলিকান সিনেটর জেডি ভান্সকে ট্রাম্পের রানিংমেট বা পরবর্তী ট্রাম্প প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ভাবা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘হত্যার চেষ্টা’ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রচারশিবিরের ‘বাড়াবাড়ির’ ফল। ট্রাম্পকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে বাইডেন হামলায় উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ দলটির কোনো কোনো নেতার।

রিপাবলিকান পার্টির কংগ্রেস সদস্য ও ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক টেইলর গ্রিন সরাসরি ডেমোক্রেটিক পার্টির দিকে আঙুল তুলেছেন। বলেছেন, ‘তারা (ডেমোক্র্যাটরা) চাইছিল এমনটা ঘটুক।’ টেইলর গ্রিন বলেন, ‘ট্রাম্প চলে যাক, এটা অনেক বছর ধরেই তারা চাইছিলেন এবং এর জন্য যা কিছু করা দরকার, সেটার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন।’

কংগ্রেস সদস্য ও রিপাবলিকান পার্টির নেতা মাইক কলিন্স হামলার জন্য সরাসরি বাইডেনকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘জো বাইডেন নির্দেশ দিয়েছেন।’

ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় ‘বিস্ময়, হতাশা ও শঙ্কা’ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। তারা বলেছেন, গণতন্ত্রে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

 

সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা, এএফপি ও রয়টার্স



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: