গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় থেকে আবার ক্যাটাগরি ২ হারিকেনে পরিণত হয়েছে বেরিল। ৮ জুলাই সোমবার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর হিউস্টনে আঘাত হানার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার এই তথ্য জানিয়েছে। হারিকেনটি মেক্সিকো উপসাগরের উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় আবার শক্তি সঞ্চয় করে হারিকেনে পরিণত হয়েছে।
জাতীয় হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) টেক্সাস উপকূলের বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে হারিকেন সতর্কতা জারি করেছে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসের বিষয়েও সতর্ক করেছে। পূর্বাভাসকারীরা আরো বলেছেন, বেরিলের প্রভাবে টেক্সাস উপকূলে ৫ থেকে ১০ ইঞ্চি (১৩ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার) বৃষ্টি হতে পারে।
উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ইতিমধ্যেই রবিবার থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মকর্তারা শহর থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলেছে।
সমুদ্র পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় রবিবার বিকেলে আমেরিকান কোস্ট গার্ড হিউস্টন বন্দর বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া টেক্সাস সিটি, ফ্রিপোর্ট এবং টেক্সাসের গ্যালভেস্টন বন্দরও বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুলও।
ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের পরিচালক মাইকেল ব্রেনান ৭ জুলাই রবিবার বিকেলে সতর্ক করে বলেছেন, বাসিন্দাদের প্রস্তুতির জন্য আর মাত্র কয়েক ঘন্টা সময় আছে।
তিনি বলেন, ‘যদি স্থানীয় কর্মকর্তারা আপনাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলে, তবে দয়া করে তা করুন।’
টেক্সাসের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক বলেছেন, ‘হারিকেন বেরিল যেসব এলাকা দিয়ে যাবে সেই এলাকার মানুষের জন্য এটি মারাত্মক একটি ঝড়।’ তিনি ১২০টি কাউন্টিকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
ক্যাটাগরি ৫ হারিকেনে পরিণত হয়ে বেরিল প্রথম আঘাত হানে ক্যারিবীয় ইউনিয়ন দ্বীপে। সেখানে সব বাড়িঘর ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।
২ জুলাই, মঙ্গলবার সকালে ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার গতিবেগে একটানা বাতাসসহ চার ক্যাটাগরির হারিকেন হিসেবে বেরিল দ্বীপটিতে আঘাত হানে। সেখানে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। অনেকে সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস, গ্রেনাডা এবং সেন্ট লুসিয়াতে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডব দেখে স্থানীয়রা হতবাক হয়ে পড়েছেন।
সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন্সের কাছে অবস্থিত দ্বীপের প্রতিটি বাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। মহাশক্তিশালী ঝড় বেরিলের ভয়াবহ ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে গোটা ইউনিয়নদ্বীপে। প্রায় পুরো দ্বীপের বাসিন্দারা এখন গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন বলে একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা।
পরবর্তী সময়ে হারিকেন বেরিল গত বুধবার জ্যামাইকায় আঘাত হানে অন্য ক্যারিবিয়ান দেশগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর। জ্যামাইকার দক্ষিণ উপকূলকে কেন্দ্র করে বেরিল আঘাত হেনেছিল। বন্যাপ্রবণ এই এলাকা থেকে বাসিন্দাদের আগেই সরানো শুরু করেছিলেন জরুরি বিভাগের কর্মীরা। কিছুটা দুর্বল হওয়ার আগে শক্তিশালী ক্যাটাগরি-৪ ঝড় হিসেবে সেখানে আঘাত হেনেছিল। ঝড়ের পর পূর্ব ক্যারিবিয়ানে ব্যাপক বন্যা এবং প্রবল বাতাসের কারণে বিধ্বস্ত দ্বীপগুলোতে যোগাযোগব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। জ্যামাইকায় ঝড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বেরিলের কারণে তখন ১০ জনের মৃত্যুর খবর বলা হয়েছিল। পরে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পওয়া গেছে।
বেরিল সর্বশেষ শুক্রবার আঘাত হানে মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে। হারিকেনের প্রভাবে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়েছিল। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভিডিওতে দেখা যায়, গত শনিবার কানকুনের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পর্যটকরা ভরে গেছে। কারণ ঝড়ের কারণে অনেক ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। বেরিল এখন টেক্সাসের পথে রয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: