প্রথমবারের মতো দেউলিয়াত্বের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সরকারের সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা বাড়াতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কংগ্রেসের রিপাবলিকান স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির মধ্যকার বৈঠক কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয়েছে।
বাইডেন এবং ম্যাককার্থির মধ্যকার বৈঠক ফলপ্রসূ না হলেও তারা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। বৈঠক শেষে ওভাল অফিস থেকে বের হয়ে স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি জোর দিয়ে বলেছেন, দেশ দেউলিয়া হওয়ার আগেই ঋণগ্রহণ সীমা বাড়াতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রশ্নে দুপক্ষই একমত।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের আলোচনা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা এখনো কোনো চুক্তিতে উপনীত হতে পারিনি, তবে আমার মনে হয়ে যেসব ক্ষেত্রে আমাদের মতবিরোধ রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে আলোচনা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। আগের যেকোনো বৈঠকের চেয়ে সোমবারের বৈঠকের ‘টোন’ অনেক ভালো ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ম্যাকার্থির সঙ্গে ওভাল অফিসের বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ উল্লেখ করে বাইডেন স্বীকার করেছেন তাদের মধ্যে এখনো মতভেদ রয়েছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমরা আবারও বলছি সমস্যা টেবিলের বাইরেই রয়েছে এবং এক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো দুপক্ষেরই পরস্পরের প্রতি আস্থা নিয়ে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আসা।
তিনি বলেন, বেশ কিছু বিষয়ে মতভেদ থাকলেও স্পিকার, আমি ও তার শীর্ষ মধ্যস্থতাকারী এবং আমাদের কর্মকর্তারা এ আলোচনা চালিয়ে যাব।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন জানিয়েছেন, মার্কিন কোষাগারে আর মাত্র দিন দশেক সরকারি ব্যয় মেটানোর অর্থ রয়েছে। ফলে এই সময়ের মধ্যে বর্তমান ঋণগ্রহণ সীমা ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে না বাড়ানো হলে কোষাগার শূন্য হয়ে যাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে যাবে। এ অবস্থায় তিনি মার্কিন কংগ্রেসের নেতাদেরকে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে আমরা বাস্তবে চরম পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস যদি সরকারের সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা বাড়াতে ব্যর্থ হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পরিবার ভয়াবহ আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হবে। বিশ্বে আমাদের নেতৃত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সক্ষমতাও প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।
ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সরকারি ব্যয় সঙ্কোচনের জন্য চাপ দিচ্ছে বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি। তবে ডেমোক্রেটিক পার্টি বলছে, সরকারি ব্যয় সঙ্কোচন ছাড়াই সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা বাড়ানো হোক। এ বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষ এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। যদিও দুপক্ষই একমত যে, দেউলিয়াত্ব এড়াতে ঋণগ্রহণ সীমা বাড়াতে হবে।
বিপুল অঙ্কের ঋণে থাকা সরকারের ঋণসীমা যদি বাড়ানো না হয়, তবে দেশ ঋণখেলাপি হবে। এমনকি এর পরিণতিতে যুক্তরাষ্ট্র মন্দায় তো পড়বেই, পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন এরই মধ্যে ১ জুন ডেডলাইন ঠিক করে দিয়েছেন।
কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা সরকারকে ঋণসীমা বৃদ্ধির অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর শর্ত দিয়ে রেখেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার এখন এমন চরম অচলাবস্থার মধ্যে আটকে আছে, যা কেবল দেশের জন্যই নয়, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এক মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে। যে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া আছে, সেটি আরো বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান, দুই পক্ষই যার যার অবস্থানে অনড়। এই অচলাবস্থার সমাধান না হলে বিশ্ব অর্থনীতিকে হয়তো এযাবৎকালের সবচেয়ে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।
দেশের সরকারের ব্যয়ের বড় খাতগুলো হচ্ছে ফেডারেল সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, সামরিক ব্যয়, সোশ্যাল সিকিউরিটি, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি। এর সঙ্গে আছে সরকারের জাতীয় ঋণের কিস্তি এবং এর সুদ পরিশোধ এবং ট্যাক্স রিফান্ড ইত্যাদি। বেশ কয়েক দশক ধরে সরকারের সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে, কারণ সরকার আসলে যা আয় করছে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করছে।
যুক্তরাষ্ট্র যদি ঋণখেলাপি হয়, তখন কী হবে? এ বিষয়ে ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ‘প্যানমিউর গর্ডনের’ প্রধান অর্থনীতিবিদ সাইমন ফ্রেঞ্চ বলেন, যদি এ রকম কিছু আসলেই ঘটে, তখন এই বিপর্যয়ের তুলনায় ২০০৮ সালের বিশ্ব ব্যাংকিং এবং আর্থিক সংকটকে এক সামান্য বিষয় বলে মনে হবে। ১৫ বছর আগের ওই সংকটের সময় বিশ্বের বড় বড় বহু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক মন্দা দেখা দিয়েছিল।
হোয়াইট হাউসের ‘কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজার্স’ হিসেব করে দেখেছে, ঋণসীমানা বাড়ালে অর্থনীতি ৬.১ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে।
সূত্র : এএফপি / বিবিসি / সিএনএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: