যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলস সোমালিয়ার উপকূলে একটি জাহাজ থেকে ইরানের তৈরি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের উপাদানগুলো জব্দ করেছে। এগুলো ইয়েমেনে হুতিদের জন্য পাঠানো হচ্ছিল বলে দাবি করেছে আমেরিকান সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)। তারা আরো জানিয়েছে, এই অভিযানের পর দুই ইউএস নেভি সিল নিঁখোজ রয়েছেন।
১৬ জানুয়ারি, মঙ্গলবার আমেরিকান সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড এক বিবৃতিতে জানায়, গত বৃহস্পতিবার সোমালিয়া উপকূলের কাছে এই ঘটনা ঘটেছিল।
সেন্টকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) জব্দ সামগ্রীর কিছু ছবি পোস্ট করেছে। ছবিতে ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট মোটর ও গাইডেন্স সিস্টেমের উপাদান দেখা যায়। একই সঙ্গে তারা জব্দ ছোট একটি নৌযানের ছবিও পোস্ট করেছে। নৌযানটি অস্ত্রসামগ্রী বহন করছিল বলে অভিযোগ করেছে তারা।
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের কাছে ইরানের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যাচ্ছিল বলে তারা জানায়। ‘ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড বা সেন্টকম’ হলো ১১টি কমব্যাট কমান্ডের একটি এবং মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে কাজ করে।
এদিকে এই অভিযানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুইজন ইউএস নেভি সিল সমুদ্রে নিখোঁজ হয়েছেন। সেন্টকম কমান্ডার বলেছেন, ‘আমরা আমাদের নিখোঁজ সতীর্থদের জন্য ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। ওই দুই ইউএস নেভি সিল সরাসরি এই অপারেশনের সঙ্গে জড়িত ছিল।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, নিখোঁজ দুই নেভি সিলস ইরান থেকে ইয়েমেনে অস্ত্র বহনকারী ইরানি জাহাজে চড়ার চেষ্টা করার সময় ‘ওভারবোর্ডে’ করে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন সমুদ্র উত্তাল ছিল। আমেরিকান নৌবাহিনীর সিলস যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একটি শাখা। সিল শব্দটি দ্বারা সমুদ্র, বায়ু ও ভূমি বোঝানো হয়।
‘ইউএস নেভি সিলস’ নৌবাহিনীর বিশেষ বাহিনী এবং নেভাল স্পেশাল ওয়ারফেয়ার কমান্ডের একটি অংশ। সরাসরি সামরিক অভিযান ও বিশেষ গোয়েন্দা অভিযান পরিচালনা করাই এ বাহিনীর মূল কাজ।
আমেরিকান নৌবাহিনী জব্দ করা জাহাজটিকে অনিরাপদ মনে করে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয় এবং এর ১৪ জন ক্রু সদস্যকে আটক করে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নেভি সিল যে অস্ত্র জব্দ করেছে, তা দিয়ে হুতিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে ব্যবহার করছে। তারা আরো জানিয়েছে, লোহিত সাগরে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ইরান এবং হুতিদের মধ্যে সরাসরি সংযোগ রয়েছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে বাণিজ্যিক জাহাজে হুতিদের হামলা শুরু হওয়ার পর এবারই প্রথম ইরানের সরবরাহকৃত উন্নত ধরনের অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সেন্টকম জানিয়েছে। ইউএস সেন্টকম কমান্ডার জেনারেল মাইকেল এরিক কুরিল্লা বলেছেন, ‘ইরান হুতিদের জন্য উন্নত ধরনের প্রাণঘাতী সহায়তার চালান চালিয়ে যাচ্ছে, এটা এখন স্পষ্ট। কিভাবে ইরান জাতিসংঘের নিরাপত্তা রেজল্যুশন ২২১৬ এবং আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন করে সমগ্র অঞ্চলে সক্রিয়ভাবে অস্থিতিশীলতার বীজ বপন করছে, এই ঘটনা তার একটি উদাহরণ।’
সূত্র : এনডিটিভি, সিবিএস নিউজ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: