বোয়িংয়ের ১৭১টি বিমানের উড্ডয়ন স্থগিতের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৭ জানুয়ারী ২০২৪ ০২:৪৫

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

আলাস্কা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট জরুরি অবতরণে বাধ্য হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্য ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বোয়িং কোম্পানির ৭৩৭ ম্যাক্স ৯ মডেলের উড়োজাহাজকে গ্রাউন্ডেড বা উড্ডয়ন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে। এ নির্দেশ ১৭১টি বোয়িং উড়োজাহাজের ওপর কার্যকর হবে বলে তারা জানিয়েছে।

৫ জানুয়ারি, শুক্রবার আলাস্কা এয়ারলাইনসের বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন অঙ্গরাজ্যে উড্ডয়নের পর পরই জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। ইউনাইটেড এয়ারলাইনস বলছে, এফএএর নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এ ধরণের ৭৯টি বিমানের পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে।

পরে সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার ৬০টির মতো ফ্লাইট বাতিলের পর কিছু উড়োজাহাজকে সার্ভিস, অর্থাৎ সেবাদান থেকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।

এর আগে এফএএ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো এয়ারলাইন কোম্পানি পরিচালনা করে বা যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে ব্যবহৃত হয়—বোয়িং কোম্পানির এমন কিছু নির্দিষ্ট ধরণের উড়োজাহাজ সাময়িকভাবে গ্রাউন্ডেড করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা তখন জানিয়েছিল, প্রতিটি বিমান পরিদর্শনের জন্য চার থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (সিএএ) নিশ্চিত করেছে, ৭৩৭ ম্যাক্স ৯ মডেলের কোনো উড়োজাহাজ দেশটিতে নিবন্ধিত নেই।

সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে জানিয়েছে, ‘আমরা যুক্তরাজ্যের নয় কিংবা বিদেশি অনুমোদিত বিমানগুলোকে যুক্তরাজ্যের আকাশসীমায় আসার আগে প্রয়োজনীয় পরিদর্শন করার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

শুক্রবার অরেগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ড থেকে আলাস্কা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ক্যালিফোর্নিয়ার অনটারিওতে যাচ্ছিল। ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় ওঠার পর এটির জরুরি অবতরণে যেতে হয়। বিমানটিতে তখন ১৭৭ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন। তবে এটি নিরাপদে পোর্টল্যান্ডে ফিরে এসে অবতরণ করতে সক্ষম হয়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিমানের ভেতর থেকে রাতের আকাশ দেখা যাচ্ছে এবং আরো কিছু জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। যদিও কাঠামোগত ক্ষতির তাৎক্ষনিক কোনো কারণও শনাক্ত করা যায়নি।

ইভান স্মিথ নামক একজন যাত্রী বলেছেন, ‘বিমানটির বাম দিকে পেছনে আঘাত করার মতো শব্দ হয়েছে—তখন সব মাস্ক নেমে আসে।’

এ ছাড়া একটি অডিও ক্লিপে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে কথা বলতে শোনা গেছে। ‘আমরা জরুরি অবস্থায়। আমাদের ফিরে যেতে হবে।’

ছবি দেখে মনে হচ্ছে বিমানটির পাখা ও ইঞ্জিনের পেছনের দিকে তৃতীয় অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে একটি অংশ আছে, যা অতিরিক্ত জরুরি বহির্গমন পথ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে আলাস্কা এ অংশটিকে সেভাবে ব্যবহার করে না।

টেরি টোজার একজন সাবেক পাইলট ও বিমান নিরাপত্তা বিষয়ক লেখক। তাঁর মতে, ওই অংশটুকু যদি জরুরি বহির্গমন পথ হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, তাহলে সেটিকে যথাযথভাবে আটকে রাখতে হবে। কিন্তু ওই অংশটুকু ছুটে যাওয়ার পর বিমানটি উড়লো কিভাবে এ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘কাছাকাছি কেউ বসলে তাদের জন্য খুবই ঝুঁকির ব্যাপার ছিল এটি। সৌভাগ্যবশত, কেউ সেখানে জানালার পাশে বসেনি। তারা যদি বেল্ট ছাড়া থাকতো তাহলে উড়ে যেতো।’

প্রাথমিকভাবে ৬৫টি বিমান গ্রাউন্ডিং করে আলাস্কা এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বেন মিনিকুচ্চি বলেছেন, ‘নিরাপত্তা পরিদর্শন ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ শেষ করার পরই কেবল প্রতিটি এয়ারক্রাফট সার্ভিসে ফিরে আসবে।’

অন্যদিকে এক বিবৃতিতে বোয়িং জানিয়েছে, তারা এফএএর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে এবং তারা আলাস্কা এয়ারলাইনসের ঘটনাটি তদন্ত কার্যক্রমে সহায়তা করছে। তারা বলেছে, ‘নিরাপত্তাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পায় এবং যা ঘটেছে সেজন্য আমাদের গ্রাহক ও যাত্রীদের কাছে দু:খ প্রকাশ করছি।’

তবে বোয়িংয়ের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত এই মডেলের বিমানটিতে এটা সর্বশেষ সমস্যা। এর আগে ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও এ মডেলের বিমান গ্রাউন্ডেড করতে হয়েছিল।

সূত্র : বিবিসি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: