তবে কি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে দেখা যাবে পালাবদলের হাওয়া?

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১ জানুয়ারী ২০২৪ ১৮:০৫

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

লড়াইটা হাতি ও গাধার। বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা। ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর বরাবরের মতোই হাতি ও গাধা—এ দুই প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের লড়াইয়ে অংশ নিতে যাচ্ছে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি। তবে এরই মধ্যে নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা, হিসাব-নিকাশ ও ছক–কষাকষি।

নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—দুই দল থেকে প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একজন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট। অপরজন দেশটির প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট, যাঁকে নানা ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।

বাইডেনের জনসমর্থন ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সময় থেকেই কমেছে।
৮১ বছর বয়সী বাইডেনের রাজনীতির বয়সটাও নেহাত কম নয়। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতির মাঠে রয়েছেন তিনি। অপরদিকে এ খেলায় তুলনামূলক নতুন ট্রাম্প। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে রাতারাতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বনে যান এই ধনকুবের ও টেলিভিশন তারকা। তিনিই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, যাঁর আগে কোনো রাজনীতি ও সামরিক অভিজ্ঞতা ছিল না।

এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনেও বাইডেন-ট্রাম্প মুখোমুখি হয়েছিলেন। সে নির্বাচনে পরাজয়ের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে বসেছিলেন ট্রাম্প। নির্বাচনের ফল পাল্টাতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে দাঙ্গা লাগিয়েছিলেন তিনি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে আদালতে ছুটতে হচ্ছে তাঁকে। নির্বাচনের আগে তাঁকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে চারটি মামলা।

এসব কারণেই আগামী নির্বাচনকে নিজের দেখা সবচেয়ে চমকপ্রদ নির্বাচন বলে মনে করছেন আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইতিহাসের অধ্যাপক অ্যালান লিটম্যান। সম্প্রতি ব্রিটিশ এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বড় একটি দল থেকে প্রার্থী হতে পারেন, এমন কারও বিরুদ্ধে বড় অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, এমন নির্বাচন আগে আমরা দেখিনি। আর এটা সাধারণ চুরিচামারির মতো কোনো অপরাধ নয়। তিনি (ট্রাম্প) আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন।’

তবে যত অভিযোগই থাকুক না কেন, ট্রাম্প তাঁর স্বভাবসুলভ গতিতে নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করে যাচ্ছেন। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন তিনি। ফৌজদারি অভিযোগগুলো থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই নাকি এসব ষড়যন্ত্র করছে ডেমোক্র্যাটরা। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলছেন, ‘শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে শিকার করতে আসছে না, আপনাদের শিকার করতে আসছে।’ এমনকি ২০২০ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানোর পর তোলা ট্রাম্পের মুখচ্ছবিও টি–শার্টে ছেপে বিক্রি করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের এসব কৌশল কাজেও লাগছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারদের ৪৭ শতাংশই সমর্থন করছেন ট্রাম্পকে। বাইডেনকে সমর্থন করছেন ৪৩ শতাংশ। আর জরিপে সম্ভাব্য তৃতীয় কোনো দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আমলে নিলে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আরও বেশি দেখা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্প ও বাইডেনের প্রতি সমর্থনের চিত্রটা যথাক্রমে—৩৭ ও ৩১ শতাংশ।

জরিপের ফলটা হয়তো ডেমোক্র্যাটদের জন্য অবাক করে দেওয়ার মতো। কারণ, বাইডেন সমর্থকেরা বলছেন, গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জন্য যথেষ্ট করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট। তাঁদের হিসাবে, বাইডেন ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। ২০২২ সালের জুনে যে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছিল, তা গত অক্টোবরে কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়াকে রুখতে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানো পশ্চিমা দেশগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছেন বাইডেন।

জরিপের ফল বাইডেন সমর্থকদের মতো অবাক করেছে অধ্যাপক অ্যালান লিটম্যানকেও। তিনি গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমি কখনোই দেখিনি, একজন প্রেসিডেন্ট এত কিছু করেও এতটা কম সমর্থন পেয়েছেন। গত শতকের ষাটের দশক থেকে যেকোনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চেয়ে দেশের ভেতরে বাইডেনের কৃত্বিত্বটা বেশি। তিনি অর্থনীতিকে টেনে তুলতে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছেন। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ট্রাম্পের চেয়ে ভালো করেছেন তিনি। মূল্যস্ফীতিও বাইডেনের আমলে দুই–তৃতীয়াংশ কমেছে।’

তবে বাইডেনের জনসমর্থন কিন্তু ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সময় থেকেই কমেছে। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশ নিয়েও চাপে রয়েছেন তিনি। সম্প্রতি আরেকটি যে কারণে বাইডেন নিজ দেশের অনেক মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন, তা হলো ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা। সেখানে ইসরায়েলের হামলা বন্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি তুলছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু তাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সায় না দেওয়ায় হামলা বন্ধ করছে না ইসরায়েল।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: