যুক্তরাষ্ট্রে যত মাদক পাওয়া যায়, তার মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে পরিচিত ও সহজলভ্য হচ্ছে ফেন্টানিল। এটি একটি প্রাণঘাতী সিনথেটিক মাদক। এটি হেরোইনের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী।
এই মাদকের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটছে। যা এরই মধ্যে সমাজে আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। প্রাণঘাতী এই মাদকের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে আরও এক ভয়ংকর মাদক। যা সাধারণত পশু চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এখানে হাত বাড়ালেই মেলে নানা ধরনের মাদক। এর মধ্যে সাইলোজাইন নামে পশু চিকিৎসার একটি ওষুধ নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে।
কারণ ওষুধটি এখন মাদক হিসেবে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। যা প্রাণঘাতী সিনথেটিক মাদক ফেন্টানিলের সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করা হচ্ছে। আর নেশায় বুদ হয়ে থাকছে নানা বয়সের মানুষ। মাদকটি এতটাই মারাত্মক যে, এটা সেবন করলে হাত-পাসহ সারা শরীরে দগদগে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক পর্যায়ে সেবনকারীর হাত-পা কেটে ফেলতে হয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ট্রেসি ম্যাককান নামে এক নারীর কথা তুলে ধরা হয়েছে। যিনি সম্প্রতি ভয়ঙ্কর মাদক ফেন্টানিলের নেশায় জড়িয়ে পড়েন। ভয়ঙ্কর এই মাদক গ্রহণের ফল এখন ভোগ করতে হচ্ছে তাকে।
প্রতিবেদন মতে, মাত্র কয়েক সপ্তাহ ইনজেকশনের মাধ্যমে ফেন্টানিল গ্রহণের পর ট্রেসির তারা হাত-পাসহ সারা শরীরে ক্ষত তৈরি হয়। এরপর সেই ক্ষতগুলো আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে ওঠে। যার ভেতরে পুজ থাকলেও ওপরে খসখসে ও কালো চামড়া দেখা যায়।
ফেন্টানিল মাদক সম্পর্কে যাদের জানাশোনা আছে, তারা বলছেন, এই মাদকের সঙ্গে এমন কিছু মেশানো হচ্ছে, যার কারণে শরীরে ভয়ঙ্কর ও বেদনাদায়ক ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। যা শুনে আঁতকে ওঠেন ট্রেসি ম্যাককানও।
মাত্র ৩৯ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘এখন আমার দিন শুরু হয় কান্নার মাধ্যমে। কারণ হাত দুটি ক্ষতের কারণে আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে।’ এরই মধ্যে তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, ট্রেসি কয়েক সপ্তাহ ধরে ইনজেকশনের মাধ্যমে যে ফেন্টানিল মাদক নিয়েছিলেন, তার সঙ্গে মিশ্রিত ছিল মূলত সাইলোজাইন নামে পশু চিকিৎসার একটি ওষুধ।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর ফিলাডেলফিয়ার অধিবাসী ট্রেসি। দেশের অন্যান্য বহু শহরের মতো এই শহরটিও মাদকের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। হাত বাড়ালেই মেলে নানা ধরনের নানা নামের মাদক। মাদকের সেই তালিকায় সম্প্রতি যোগ হয়েছে সাইলোজাইন।
রাস্তায় আর ওলি-গলিতে এটি ‘ট্রাঙ্ক’ বা ‘ট্রাঙ্ক ডোপ’ হিসেবেই পরিচিত। ট্রাঙ্ক শব্দটি ট্রাঙ্কুইলাইজার থেকে এসেছে। সাইলোজাইন সাধারণত পশু চিকিৎসায় বা পশুকে ট্রাঙ্কুইলাইজ বা অজ্ঞান করতে ব্যবহার হয়। কেউ কেউ একে ‘জোম্বি ড্রাগ’ও বলে। এটাকে ফেন্টানিল মাদকের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে। ফলে এর প্রভাব বা ফলাফল আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছে।
সাইলোজাইন আইনত বৈধ একটি ড্রাগ বা ওষুধ। এখন থেকে ৫০ বছর আগেই আমেরিকান ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডিএ পশু চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে এর অনুমোদন দিয়েছে। সেই ওষুধটিই এখন ভয়ংকর ও প্রাণঘাতী মাদক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে অনেকটা নির্বিকার আমেরিকান আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: