জেনারেটিভ এআই মানুষের মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহারে রূপান্তর আনতে পারে। এসময় এআই অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছে অ্যাপল। অ্যাপল ইনকর্পোরেশন নীরবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, যা চ্যাটজিপিটি ও গুগল বার্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। তবে গ্রাহকদের সামনে তাদের প্রযুক্তি নিয়ে আসার জন্য এখনো কোন কৌশল কিংবা সময়সীমা নির্ধারণ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিতরা জানিয়েছেন, আইফোন নির্মাতারা বৃহৎ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরির জন্য 'আয়াক্স' নামের নিজস্ব কাঠামো দাঁড় করিয়েছে। আয়াক্সের মাধ্যমেই অ্যাপল চ্যাটবট পরিষেবা নিয়ে আসছে। কিছু প্রকৌশলী এই পরিষেবার নাম বলছেন 'অ্যাপল জিপিটি'।
সাম্প্রতিক সময়ে চ্যাটজিপিটির মত জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি তৈরিতে অ্যাপল জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি গোপনীয় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্পৃক্তরা বলছেন, বেশ কয়েকটি দল এই প্রকল্পে কাজ করছে। এই প্রজেক্টে এআই সম্পর্কিত গোপনীয়তা সংক্রান্ত সম্ভাব্য উদ্বেগ সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে অ্যাপল কর্তৃপক্ষ থেকে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
১৯ জুলাই, বুধবার ব্লুমবার্গে অ্যাপলের চ্যাটবট তৈরির প্রচেষ্টা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ২ শতাংশ বেড়ে ১৯৮.২৩ ডলার হয়েছে। অন্যদিকে ওপেনএআই এর অংশীদার মাইক্রোসফ্ট কর্পোরেশনের শেয়ার ১ শতাংশ কমে গেছে।
গত বছর ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি, গুগল বার্ড এবং মাইক্রোসফ্টের বিং বাজারে আসার পর প্রযুক্তি বাজারে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে অ্যাপল। যদিও অ্যাপল বছরের পর বছর ধরে তাদের পণ্যগুলিতে এআই ফিচার ব্যবহার করেছে। তবে এখন তারা বাজারের অন্যান্য চ্যাটবটগুলোকে ধরার চেষ্টা করছে। যেগুলো টেক্সট নির্দেশনা থেকেই প্রবন্ধ, ছবি এমনকি ভিডিও তৈরি করতে পারে। গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রযুক্তিটি সাড়া ফেলেছে এবং বাজারে একরকম শোরগোল পড়ে।
স্পষ্টতই এআই উন্মাদনা থেকে দূরে ছিল অ্যাপল। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাপলের ভয়েস অ্যাসিস্টেন্ট 'সিরি' মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে একই সাথে অ্যাপল আইফোনে ছবি ও সার্চ করার ফিচারে অগ্রগতি করেছে। চলতি বছর বাজারে আসতে চলা তাদের অটো-কারেক্ট ফিচারের আরো স্মার্ট সংস্করণ আসছে।
গত মে মাসে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক বলেন, যদিও এই প্রযুক্তির যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে তবে 'অসংখ্যা সমস্যা আছে যেগুলোর সমাধান দরকার'। তিনি জানান, অ্যাপল তার আরো অনেক পণ্যে এআই যুক্ত করবে, তবে সতর্কতার সাথে।
গুড মর্নিং আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কুক জানান, তিনি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন এবং কোম্পানি এগুলোকে 'নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে'।
তবে প্রকৃত সত্য হলো, ডিভাইস ব্যবহারে সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে অ্যাপল উদ্বিগ্ন। জেনারেটিভ এআই মানুষের মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহারে রূপান্তর আনতে পারে। এসময় এআই অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছে অ্যাপল।
এ কারণেই অ্যাপল আয়াক্সের মাধ্যমে এআই পরিষেবার ভিত্তি স্থাপন করেছে। এবং অভ্যন্তুরীণ ব্যবহারের জন্য চ্যাটজিপিটির মতো টুল তৈরি করেছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচিত লোকজন বলেন, মেশিন লার্নিং উন্নয়নের জন্য গত বছর প্রথম আয়াক্স ব্যবহার শুরু করা হয়।
সংস্থাটি ইতিমধ্যেই আয়াক্সের উপর ভিত্তি করে সার্চ, সিরি এবং মানচিত্রে এআই ভিত্তির অগ্রগতি ব্যবহার করছে। এছাড়াও বৃহৎ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ও চ্যাটজিপিটির মতো টুল তৈরিতে আয়াক্স ব্যবহার করা হচ্ছে।
পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য প্রকৌশলীদের ছোট একটি দল গত বছর চ্যাটবট অ্যাপ তৈরি করে। জেনারেটিভ এআই নিয়ে উদ্বেগের কারণে অ্যাপলের পণ্যে এটির ব্যবহার স্থগিত রাখা হয়। তবে এখন আরো বেশি সংখ্যক কর্মী অ্যাপলের নিজস্ব এআই ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছেন। তবে তারজন্য বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। তবে এতে শর্তও আছে। আয়াক্স থেকে তৈরি কোন কিছু বাজারে বিক্রি হতে চলা পণ্যে ব্যবহার করা যাবে না। এখন অনেক অ্যাপলকর্মী নমুনা পণ্যে এটি ব্যবহার করছেন।
বিষয়টির সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী বছর এআই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে অ্যাপল।
সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: