ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টে শিশুদের নাচের কর্মশালায় হামলার ঘটনার পর হামলাকারীর পরিচয় ঘিরে গুজবে বিশ্বাস করে একটি মসজিদে হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ একদল লোক। তাদের থামাতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হয়েছে পুলিশও। এতে অন্তত ৩৯ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। খবর বিবিসির।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৯ জুলাই, সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে সাউথপোর্টে শিশুদের একটি নাচের কর্মশালায় ছুরি হাতে অতর্কিত হামলা চালায় ১৭ বছর বয়সী এক তরুণ। এতে দুই শিশু প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আরও ৭ জন শিশু আহত হয়। তাদের সবার বয়স ৬ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। হামলাকারীকে থামাতে গিয়ে এ সময় আহত হন আরও দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি। আহতদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
হামলাকারী তরুণকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। তবে ব্রিটেনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই তরুণের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি।
এরই মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, হামলাকারী ওই তরুণ মুসলিম। ৩০ জুলাই, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহতদের স্মরণে শোক মিছিল করে ঘটনাস্থলে যান হতাহতদের স্বজন ও সাধারণ লোকজন। তার কাছাকাছিই অবস্থিত একটি মসজিদ। হতাহত শিশুদের স্বজনদের শোক মিছিল শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর একদল উগ্র লোক মসজিদটিকে লক্ষ্য হামলা চালান। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের ওপর আক্রমণ করেন হামলাকারীরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে অজস্র ইট-পাটকেল ও বোতল ছোড়েন তারা। এতে অন্তত ৩৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য আহত হন।
কয়েক ঘণ্টা সংঘাতের পর দাঙ্গাকারীদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হয় পুলিশ। ওই এলাকার পরিস্থিতি এখনও থমথমে বলে জানিয়েছে বিবিসি। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, এই দাঙ্গাকারীরা ইংলিশ ডিফেন্স লীগ নামের একটি উগ্র ডানপন্থি রাজনৈতিক দলের কর্মী। এই দলটি এর আগেও মুসলিমদের লক্ষ্য করে একাধিকবার হামলা করেছে বলে উল্লেখ রয়েছে পুলিশের রেকর্ডে।
মার্সিসাইড পুলিশের মুখপাত্র এবং অ্যাসিসটেন্ট চিফ কনস্টেবল অ্যালেক্স গস এক বিবৃতিতে বলেন, মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় সাউথপোর্ট পুলিশকে গুরুতর সহিংসতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। দীর্ঘক্ষণ পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে।
দাঙ্গাকারীদের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টার্মারও। বুধবার (৩১ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি বলেন, সাউথপোর্টের জনগণ এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। যারা শোকার্ত জনগণের একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সহিংস ও গুণ্ডামিতে পরিপূর্ণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: