ত্রিশটি লাগেজে করে অবৈধ তামাক পাতা জর্দ্দা, গুল ও বিড়ি সৌদি আরব নেওয়ার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের তিনটি হজ এজেন্সি। এজন্য একটি লিড এবং দুটি সমন্বয়কারী হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না- তা জানতে চেয়ে নোটিশ জারি করেছে দেশটির ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
রোববার (১৪ জুলাই) লিড এজেন্সি খিদমাহ ওভারসিজ এবং সমন্বয়কারী এজেন্সি জিলহজ্ব ট্রাভেলস এবং আত-তাবলীগ হজ সার্ভিসের স্বত্বাধিকারীকে চলতি মাসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ২০২৪ সনের হজ মৌসুমে অংশগ্রহণকারী ২৫৯ টি এজেন্সি ও লিড এজেন্সির মধ্যে 'খিদমাহ ওভারসিজ' একটি। এ এজেন্সির নিবন্ধিত হজযাত্রী ১৪১ জনের সঙ্গে সমন্বয়কারী এজেন্সি হিসেবে ৫৬ জন হজযাত্রী নিয়ে 'জিলহজ্ব ট্রাভেলস', ৫৪ জন হজযাত্রী নিয়ে 'আত-তাবলীগ হজ সার্ভিস' এবং ৪০ জন হজযাত্রী নিয়ে 'আল-তাকওয়া হজ কাফেলা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস' হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।
গত ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়ে ১২ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ ১১ জুন ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লিড এজেন্সি 'খিদমাহ ওভারসিজের মোট ১৯৫ জন হজযাত্রীর মধ্যে ঐ এজেন্সির ১১১ জন, সমন্বয়কারী এজেন্সি জিলহজ্ব ট্রাভেলসের ৩৪ জন এবং আত-তাবলীগ হজ সার্ভিস' এর ৩৭ জন নিবন্ধিত হজযাত্রী ছিলেন।
ফ্লাইনাসের ওই ফ্লাইটে লিড এজেন্সি খিদমাহ ওভারসিজের হজযাত্রীদের চেক ইন চলাকালে তামাক পাতা, জর্দা ও বিড়িসহ একটি লাগেজ শনাক্ত করা হয়। এরপর খিদমাহ ওভারসিজের মোনাজ্জেম মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, জিলহজ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুস সাত্তার এবং গ্রুপ লিডার মো. বাবুল মিয়া শনাক্ত করা ওই লাগেজসহ আরও ৩০টি লাগেজ নিয়ে হজক্যাম্প ত্যাগের চেষ্টা করলে ক্যাম্পের মূল ফটকে বাংলাদেশ স্কাউটের সদস্য এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাগেজগুলো জব্দ করে। ওই ৩০টি লাগেজের মধ্যে দুটি লাগেজের তালা ভেঙ্গে সেখানে বিপুল পরিমাণ তামাক পাতা, জর্দা ও বিড়ি পাওয়া যায়।
সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রুপ লিডার বাবুল মিয়া জানান ৩০টি লাগেজের সবগুলোতেই এমন সামগ্রী আছে। বর্তমানে ৩০টি লাগেজ আশকোনার হজ অফিসে জব্দ অবস্থায় রয়েছে। দুটি লাগেজ ছাড়া প্রায় সব লাগেজেই হজযাত্রীর নামসহ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। লাগেজগুলোর ভেতরে রাখা অবৈধ পণ্য সামগ্রী হজযাত্রীর নয়; বরং সংশ্লিষ্ট ৩টি এজেন্সির যারা পরিকল্পিতভাবেই এই অবৈধ কাজটি করতে চেয়েছিলেন বলে প্রতীয়মান হয় বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি আরবগামী ফ্লাইটে তামাক পাতা-জর্দা ও বিড়ি পরিবহনে সৌদি সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জেদ্দা বিমান বন্দরে এর আগেও হজযাত্রীর লাগেজে তামাক পাতা-জর্দা ও গুল ধরা পড়লে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানায়। তামাক পাতা-জর্দা ও গুল ভর্তি এই ৩০টি লাগেজ সৌদি বিমানবন্দরে ধরা পড়লে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হতো এবং সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তো। এ ধরনের কার্যক্রম 'হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন' ২০২১' এর পরিপন্থি।
তাই লিড এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্ট দুটি সমন্বয়কারী এজেন্সির হজ লাইসেন্স বাতিলসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না- এর ব্যাখ্যা ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দাখিলের নির্দেশ দিয়ে নোটিশে জানানো হয়, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিমানবন্দর থানায় এরইমধ্যে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: