জিলহজ মাসের নবম দিন আরাফা প্রাঙ্গণে সমবেত হবেন সারা বিশ্বের হাজিরা। সেদিন মসজিদে নামিরা থেকে উপস্থিত হাজিদের উদ্দেশে আরবিতে খুতবা দেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার প্রকল্পের অংশ হিসেবে এবার বাংলাসহ ২০টিরও বেশি ভাষায় এর অনুবাদ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
এ বছর সেই খুতবার বাংলা অনুবাদ করবেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের চার শিক্ষার্থী।
তাঁরা হলেন মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী ও মুবিনুর রহমান ফারুক এবং জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজমুস সাকিব। গত বছরও তাঁরা আরাফার খুতবার অনুবাদ কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।
ড. খলীলুর রহমান জানান, ২০২০ সাল থেকে আরাফার খুতবার বাংলা অনুবাদ কার্যক্রক্রম শুরু হয়। ২০২৩ সালে অনুবাদ প্রকল্প সম্প্রসারণ হলে এতে প্রতি সপ্তাহের জুমার খুতবাও যুক্ত হয়। জুমার পাশাপাশি ঈদ, হজ, ইস্তিসকা, বিভিন্ন দরস, বই-পুস্তক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হারামাইনের বিভিন্ন পোস্টের বাংলা অনুবাদও চলছে।
ড. খলীলুর রহমান গত বছর মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিগগিরই তাঁর স্ত্রীও পিএইচডি সম্পন্ন করবেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার শাসনগাছায়।
১৯৯২ সালে তিনি ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা থেকে কামিল বিভাগে দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেন। সৌদি আরবে যাওয়ার আগে এক বছর তিনি নওগাঁ কামিল মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে মাওলানা আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কীর মাধ্যমে ২০২০ সালে হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ শুরু হয়। তা ছাড়া তিনি পবিত্র মসজিদুল হারামের জুমার খুতবা অনুবাদ কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন। তাঁর বাড়ি কক্সবাজার জেলার রামুতে।
বর্তমানে তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষক হিসেবে অধ্যয়নরত। ১৯৯৮ সালে তিনি তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে হাদিস বিভাগে কামিল ও মাদরাসা-ই-আলিয়া থেকে তাফসির বিভাগে কামিল ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত গাউছিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আরবি প্রভাষক ছিলেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৫ জুন হাজিদের সবাই আরাফা প্রাঙ্গণে অবস্থান করবেন। সেদিন ২০ লাখেরও বেশি হাজির উদ্দেশে মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেবেন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম শায়খ মাহের বিন হামাদ আল-মুয়াইকিলি। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণী পৌঁছে দিতে ২০টি ভাষায় খুতবা সম্প্রচার করা হবে। এসব কাজের তত্ত্বাবধান করছে মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী সাধারণ কর্তৃপক্ষ।
যেকোনো ডিভাইস থেকে মানারাতুল হারামাইন (https://manaratalharamain.gov.sa/) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একটি ভাষা নির্বাচন করলে খুতবার অনুবাদ শোনা যাবে। তা ছাড়া মানারাতুল হারামাইন মোবাইল অ্যাপ, আল-কোরআন চ্যানেল, আস সুন্নাহ চ্যানেলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটারে তা শোনা যাবে। ওয়েবসাইটে বিগত বছরের খুতবা ও এর অনুবাদও পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, গত ১৪৩৬ হিজরি মোতাবেক ২০১৫ সালে জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগের তত্ত্বাবধানে পাঁচটি ভাষায় আরাফার খুতবা অনুবাদ প্রকল্প যাত্রা শুরু হয়। ২০২০ সালে বাংলাসহ মোট ১০টি ভাষায় খুতবার অনুবাদ করা হয়। ২০২২ সালে ১৪টি ভাষায় এবং ২০২৩ সালে ২০টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। মূলত সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে প্রতিবছর অনুবাদ কার্যক্রমে নতুন ভাষা যুক্ত করা হচ্ছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: