বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২ জানুয়ারী ২০২৪ ০৪:১৩

বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ : সংগৃহীত ছবি বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ : সংগৃহীত ছবি

জর্ডানের আম্মানভিত্তিক দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার ২০২৪ সালের শীর্ষ প্রভাবশালী পাঁচশ মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় রয়েছেন সৌদি বাদশাহ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট, কাতারের আমির, মরক্কোর রাজাসহ আরও অনেকে।

‘দ্য মুসলিম ৫০০: ৫০০ ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস ২০২৪’ শীর্ষ ওই তালিকায় ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ বা বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে উঠে এসেছেন মালয়েশীয় মুসলিম দার্শনিক সাইয়েদ মুহাম্মদ নাকীব আল আত্তাস ও ‘ওম্যান অব দ্য ইয়ার’ তথা বর্ষসেরা নারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সোমালিয়ার অষ্টম পররাষ্ট্রমন্ত্রী এডনা আদান ইসমাইল। তিনি একজন নার্স মিডওয়াইফ, অ্যাক্টিভিস্ট, ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সোমালিল্যান্ডের প্রথম মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

তালিকায় প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের শীর্ষে রয়েছেন শায়খ হাবিব উমর বিন মুহাম্মদ বিন সালিম বিন হাফিজ, তিনি একজন ইয়েমেনি সুন্নি সুফি। আলেম। শিক্ষক, দার আল-মুস্তাফা শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ডিন। তিনি আবুধাবিতে তাবাহ ফাউন্ডেশনের সুপ্রিম উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যও ছিলেন।

এরপরই রয়েছেন বরাবরের মতো সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ হজ সাইয়্যেদ আলী খামেনি। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামিদ আল-থানি। জর্ডানের রাজা, জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলির কাস্টোডিয়ান এইচএম বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ইবনে আল-হুসেইন। এইচএইচ প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান সংযুক্ত আরব আমিরাত। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়েব এরদোগান।

পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি, আন্তর্জাতিক আলেম, ইসলামি স্কলার, দেওবন্দি আলেম শেখ মুহাম্মদ তাকি উসমানি। আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী হুসেইন আল-সিস্তানি, হাওজার মারজা, নাজাফ, ইরাক। এইচএম কিং মোহাম্মদ ষষ্ঠ মরক্কোর রাজা। শেখ সালমান আল-আওদা পণ্ডিত ও ইসলামের বিশিষ্ট দায়ী। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল-আজিজ আল-সৌদ, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স। রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো, ইন্দোনেশিয়া। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ ডক্টর আহমদ মুহাম্মাদ আল-তাইয়েব গ্র্যান্ড শেখ, আল-আজহার মসজিদের গ্র্যান্ড ইমাম।

ইসমাইল হানিয়া, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান। মাওলানা মাহমুদ মাদানী, জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের নেতা ও সভাপতি, ভারত। আনোয়ার ইব্রাহিম (এইচএম) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। এইচআরই আমিরুল মুমিনিন শেখ আস-সুলতান মুহাম্মদ সাদু আবুবকর তৃতীয় সোকোটোর সুলতান। মহামান্য শেখ আবদুল্লাহ বিন বায়াহ, পণ্ডিত ও মুসলিম সমাজে শান্তি প্রচার ফোরামের সভাপতি। ইয়াহইয়া সলিল স্তাকুফ ইন্দোনেশিয়ার নদওয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান। রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ সাইদ আল-সিসি মিশর।

শেখ ডা. আলী গোমা, মিশরের আরব প্রজাতন্ত্রের প্রাক্তন গ্র্যান্ড মুফতি। শেখ হাবিব আলি জাইন আল আবিদীন আল-জিফরি, দীন প্রচারক ও তাবাহের মহাপরিচালক। ড. ইব্রাহিম কালিন, তুর্কি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক। শেখ হামজা ইউসুফ হ্যানসন, জয়তুনা কলেজের শিক্ষক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা। শেখ আহমদ তিজানি বিন আলী সিসি, তিজানিয়ার নেতা।

শেখ মোস্তফা হোসনি, দায়ি। সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ, হিজবুল্লাহর মহাসচিব। শেখ আবদুল-আজিজ ইবনে আবদুল্লাহ আল আল-শেখ, সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি। শেখ উসামা আল-সায়্যিদ আল-আজহারী, ইসলামিক স্কলার, আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ। এইচএইচ শাহ করিম আল-হুসাইনী, আগা খান চতুর্থ, ইসমাইলি মুসলমানদের ৪৯তম ইমাম। আল-হাবিব লুৎফি বিন ইয়াহিয়া, ইসলাম প্রচারক। মাওলানা তারিক জামীল, আলেম ও ইসলাম প্রচারক।

শেখ মুহাম্মদ আল-ইয়াকুবি স্কলার। অধ্যাপক সাইয়্যেদ হোসেন নাসর দার্শনিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। রাষ্ট্রপতি সামিয়া সুলুহু হাসান তানজানিয়া। শেখ উসমান তাহা, ক্যালিগ্রাফার। শেখ আব্দুল মালিক আল-হুথি হুথি নেতা। শেখ রাচেদ ঘন্নুচি তিউনিসিয়ান রাজনীতিবিদ। মোহাম্মদ সালাহ ফুটবলার। শেখ মুক্তাদা সদর আলেম ও রাজনৈতিক। মাওলানা নাজুরুর রহমান, তাবলিগ জামাতের আমির, পাকিস্তান।

ড. টিমোথি উইন্টার (শেখ আবদাল হাকিম মুরাদ) স্কলার। শেখ ইব্রাহিম সালচ স্কলার। তালেবান নেতা মোল্লা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। দাওয়াত-ই-ইসলামি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুহাম্মদ ইলিয়াস আত্তার কাদিরি। ড. সৈয়দ মুহাম্মদ নকীব আল-আত্তাস (এইচএম)। ডা. আমর খালেদ, প্রচারক এবং টেলিভ্যাঞ্জেলিস্ট। অধ্যাপক মোস্তফা আবু জর।

এ তালিকায় সর্বমোট ৫০০ জনের নাম ওঠে এসেছে। তার মধ্যে প্রথম সারির ৫০ নাম আমরা উল্লেখ করেছি। এরমধ্যে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ বা বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব সাইয়েদ মুহাম্মদ নাকীব আল আত্তাস ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ জন্ম গ্রহণ করেন। একজন মালয়েশীয় মুসলিম দার্শনিক। তিনি এমন কয়েকজন সমসাময়িক পণ্ডিতের একজন, যারা ঐতিহ্যগত ইসলামি বিজ্ঞানে সম্পূর্ণরূপেই নিহিত হয়ে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, অধিবিদ্যা, ইতিহাস ও ভাষাসাহিত্য অধ্যয়ন করেন। তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইসলামিকরণের ধারণার পথপ্রদর্শক।

তিনি ইসলামি চিন্তাধারা ও সভ্যতা-সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক বিশেষ করে সুফিবাদ, সৃষ্টিতত্ত্ব, অধিবিদ্যা, দর্শন এবং মালয় ভাষা ও সাহিত্যের উপর সাতাশটি গ্রন্থের লেখক। মুহাম্মদ নাকিব আল–আত্তাস ওলন্দাজ পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম জাভার বেগোরের একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যার ইতিহাসে বিখ্যাত পূর্বপুরুষ ও সুফিসাধকের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। কিছু সূত্র মতে, হাদরামাউতের বাআলাউয়ি সাইয়িদদের মাধ্যমে তার বংশ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে পাওয়া যায়। পিতার তিন পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার বড় ভাই সাইয়েদ হুসাইন আত্তাস, যিনি একজন শিক্ষাবিদ ও পরে রাজনীতিবিদ হন। তিনি শিক্ষাবিদ উংকু আব্দুল আজিজের চাচাতো ভাই।

‘ওম্যান অব দ্য ইয়ার’ তথা বর্ষসেরা নারী হিসেবে নির্বাচিত সোমালিয়ার অষ্টম পররাষ্ট্রমন্ত্রী এডনা আদান ইসমাইল। তিনি হারগেইসার এডনা আদান ম্যাটারনিটি হাসপাতালের পরিচালক এবং প্রতিষ্ঠাতা। তিনি মোহাম্মদ হাজি ইব্রাহিম এগালের সাথে বিয়ে করেছিলেন যিনি সোমালিয়ার স্বাধীনতার পাঁচ দিন আগে সোমালিল্যান্ড রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পরে সোমালি প্রজাতন্ত্র সোমালিল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ফিস্টুলা ফাউন্ডেশনের সিইও কেট গ্রান্ট তাকে ‘মুসলিম মাদার তেরেসা’ বলে অভিহিত করেছেন। ২০১৮ সালে, তাকে লন্ডন সাউথ ব্যাংক ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে তিনি টেম্পলটন পুরস্কারে ভূষিত হন।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মগুলোর অন্যতম ইসলাম। বিশ্বজুড়ে এ ধর্মের অনুসারী তথা মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটিরও বেশি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। দেশ, জাতি ও গোষ্ঠী পৃথক পৃথক হলেও তারা সবাই এক উম্মাহ তথা বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের অংশ। বিশ্বে মোট ৫৬ টি মুসলিমপ্রধান দেশ আছে। বর্তমানে বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০% এশিয়ায় বসবাস করে।

 

সূত্র : দ্য মুসলিম ফাইভ হান্ড্রেড

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: