চৈত্র মাসের মাসলা পৌষ মাসে - জসীমউদ্দীন

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১ জুলাই ২০২৩ ০২:৪৪

চৈত্র মাসের মাসলা পৌষ মাসে - জসীমউদ্দীন ঃ সংগৃহীত ছবি চৈত্র মাসের মাসলা পৌষ মাসে - জসীমউদ্দীন ঃ সংগৃহীত ছবি


মৌলবী সাহেবের তালেব এলেম (ছাত্র) সবে মৌলবী হয়েছেন। ছাত্র অবস্থায় ওস্তাদের বক্তৃতায় যে যে কথা শুনেছেন, তারই মতো সুর করে সেই সব কথা বলেন। নূতন মৌলবীর গলার সুর আরও সুন্দর বলে ঘন ঘন তিনি দাওয়াত পান।


সেবার পৌষ মাসে এক গৃহস্থ বাড়ি তাঁহার দাওয়াত হয়েছে। বক্তৃতা করতে করতে মৌলবী সাহেব বলে ফেললেন, “মেয়ে লোকের ব্যবহার করা কোনো কাপড়-পোষাক আলেম ওস্তাদকে দেওয়া ঠিক না। ইহাতে খুব গুনাহ্ হয়।”

পাড়াগাঁওয়ের চাষী মুসলমানদের বাড়িতে মেয়েদের পরার কাপড় দিয়েই সাধারণত শীতকালের কাঁথা তৈরি হয়। কারণ পুরুষদের চাইতে মেয়েদের কাপড় পুরু।

বাড়ির কর্তা গরীব মানুষ, লেপ কেনার পয়সা নাই। শীত নিবারণের জন্য কয়েকখানা মাত্র কাঁথা আছে। তাও মেয়েদের শাড়ী কাপড় দিয়ে তৈরি। তাই রাত্রের আহারের পরে সে মৌলবী সাহেবকে শীত নিবারণের জন্য কিছুই দিতে পারল না। কারণ মৌলবী সাহেব ওয়াজের সময় বলেছেন, মেয়েলোকের কাপড়ের তৈরি কাঁথা মৌলবী-মাওলানাদের দিতে নাই। দিলে খুব গুনাহ্ হবে। শূন্য মাদুরের উপর বসে মৌলবী সাহেব সারারাত শীতে ঠির ঠির করে কেপে কেপে কাটালেন। একটুকুও ঘুমাতে পারলেন না। শুধু কি এই বাড়িতে? ইহার পর মৌলবী সাহেব যেখানেই দাওয়াত খেতে যান, কেহই মৌলবী সাহেবকে রাত্রে শোয়ার জন্য কাঁথা কাপড় দেয় না। কারণ তারা আগের সেই চাষীর বাড়িতে মৌলবী সাহেবের ওয়াজ শুনে এসেছে।


শীতের কষ্ট আর কত দিন সহ্য করা যায়? সারারাত শীতের কাঁপুনীতে না ঘুমিয়ে মৌলবী সাহেবের চোখ দুটি লাল জবাফুল, তার উপর আবার সর্দি-কাশি।

একদিন তিনি তাঁর ওস্তাদ মৌলবী সাহেবের সঙ্গে দেখা করে বললেন, “হুজুর! আপনার শিক্ষা মতো আমি সব জায়গায়ই ওয়াজ করে বেড়াই। কিন্তু এক জায়গায় গিয়ে বড়ই মুস্কিলে পড়েছি।”

ওস্তাদ জিজ্ঞাসা করলেন, “কি মুস্কিল, খোলাসা করে বলো তো!”

তখন মৌলবী সাহেব জবাব দিলেন, “এক চাষীর বাড়িতে আমি বক্তৃতায় বলিলাম, “স্ত্রীলোকের ব্যবহার করা কোনো কাপড় মৌলবী-মাওলানাদের দিতে নাই। তাতে খুব গুনাহ্ হয়।”

সেই হতে যে বাড়িতেই আমি দাওয়াত পাচ্ছি, বাড়ির কর্তা শীতের রাতে আমাকে কোনো কাঁথা-কাপড় দেয় না। এই দেখুন, শীতের রাত জাগতে জাগতে আমার কি হাল হয়েছে।”

ওস্তাদ খানিকটা চুপ করে থেকে বললেন, “আরে বেয়াক্কেল। চৈত্র মাসের বক্তৃতা তুমি পৌষ মাসে করেছ। তোমার মতো গাধা আর নাই। কাঁথা-কাপড়ের বক্তৃতা গরমকালের জন্য মূলতবী রাখবে। আমি কি শীতকালে তোমাকে এরূপ ওয়াজ করতে বলেছিলাম?”

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: