বিশ্ব বিখ্যাত কবিদের দৃষ্টিতে হযরত মোহাম্মদ (সা:)

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৩

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। এ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন মহাত্মা মনীষীর গুণাবলী ও আদর্শ চরিত্রে তাকে অতিক্রম করতে পারেননি। পৃথিবীর সকল মহাপুরুষের সকল মহৎ গুণাবলী তার মাঝে একক ভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছিল। ফলে তিনি যে কোন বিবেচনায় জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ। এই বিশাল ব্যক্তিত্ব যুগ যুগ ধরে সকল প্রকার মানুষের হৃদয় জয় করে চলছেন। তার ভালবাসায় মুগ্ধ হয়েছিল অগণিত বনী আদম।

মানুষের এই অশেষ প্রীতি ও মুগ্ধতার ছায়া পড়েছে বিশ্ব সাহিত্যেও। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, হযরত মুহাম্মদ (সা:)এমনই একজন মহামানব যিনি বিশ্ব সাহিত্যে আদর্শ ও ব্যক্তি চরিত্রের বিচারে সবচাইতে বেশী স্মরণীয়। বস্ত্তত সাহিত্য ও ঐতিহাসিকতার ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত এমন মহাপ্রাণ আর একজনও নেই। মহানবী হযরত (সা:) এর মহান জীবন চরিত বিশ্ববাসীর প্রগাঢ় শ্রদ্ধা ও ভালবাসার এক জীবমত্ম উৎস। তাই সর্বকালের এই সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবকে নিয়ে যুগে যুগে অসংখ্য কবি সাহিত্যিক তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে রচনা করেছেন অসংখ্য কবিতা ।

প্রসিদ্ধ কবি হাস্সান বিন সাবিত (রা:) রাসূলে করিম হযরত মোহাম্মদ (সা:) কে উদ্দেশ্য করে বেশ কিছু কবিতা রচনা করেছেন। তার কবিতার কিছু অংশ- ‘‘তোমার তারিফ করি সে ভাষা আমার জানা নেই আমি তো অধম কবি, ভাষায় দারুন দুর্বলতা, প্রশংসা পাবে না তুমি আমার অক্ষম কবিতায় তোমার পরশ পেয়ে এ কবিতা অমরতা পাবে এই আশা বুকে নিয়ে হাস্সান তোমার কৃপা চায়।’’

প্রখ্যাত কবি কাব ইবনে যুহাইর রা. নবীজিকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন- তুমি নূর ঘুচায়েছ তিমির বিশ্ব জাহান খোদার হাতের তুমি প্রভাময় মুক্ত কৃপাণ।

শরফুদ্দীন ইবনে সাঈদ আল বুসাইরী কাসিদাতুল বুরদা এক উন্নত স্থানের অধিকারী। - পাপ করেছি ঢের যদিও আশা তবু এ বুক জুড়ে দিবেন না মোর দয়াল নবী বাঁধন ছিড়ে তাড়িয়ে দূরে। দয়াল নবীর পাক শাফায়াত সেদিন যদি না পাই আহা ধ্বংস ছাড়া ভাগ্যে আমার রইবে না আর বাঁচার রাহা। ভাবছি মনে তার তারিফের কাব্য কুসুম মালা গাঁথি, এই হবে মোর রোজ হাশরে বিপদকালের শ্রেষ্ঠ সাথী।

আরবী কাব্য সাহিত্যের ইতিহাসে আরেকটি বিশ্বখ্যাত অনবদ্য না’ত রচনা করেছেন শেখ সাদী। মূলত : ফার্সী কবি হলেও আরবীতে এ নাত বর্তমানেও সমান জনপ্রিয়। বালাগাল উলা বেকামালিহী না’তটির অনুবাদ-তাবৎ পূর্ণতা নিয়ে শীর্ষে হয়েছে উপনীত। অপার সৌন্দর্যে তিনি আলো করেছেন তমসাকে, আশ্চার্য চরিত্র তার, অতুল সৌন্দর্যে মন্ডিত রাহমাতুলল্লিল আলামীন হাজার সালাম তাকে।

ফারসী সাহিত্যের এক অনন্য প্রতিভা মওলানা জালাল উদ্দীন রুমী বিশ্ববিশ্রুত মসনবী শরীফের বহু ছত্রে প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)-এর নাম ভক্তি ভাবে উচ্চারণ করেছেন এভাবে- ইঞ্জিলে রয়েছে নাম নবী মোস্তফার প্রাণের সাগর তিনি নবীদের সরদার। ইঞ্জিলে রয়েছে তার দেহের গড়ন, অবয়ব, আহার, পানীয়, রোজা, রীতি- নীতি আছে যত, সব।

রাসূল প্রেমিক আর এক কবি আল্লামা জামী মনের ভাব ব্যক্ত করেন এভাবে- হে সৌন্দর্যের রাজা, হে মানব কুলের সর্দার তোমার চেহারার জ্যোতিতে চাঁদ পেল আলো। তোমার প্রশংসা করার ভাষা আমার জানা নেই সংক্ষেপে এইটুকু বলি। আল্লাহ্র পরেই তোমার আসন।

কবি হাফিজ বলেন- দেখ শত শত মনি ভবের বাজারে বিকাইছে প্রতিদিন, মোর কহিনুর মণি পার্শ্বে হইল সব মণি জ্যেতিহীন।

ওমর খৈয়ামের উচ্চারণে আমরা শুনি- ওহে ঐ ব্যক্তি যে বিশ্বের অদ্বিতীয়। আমার মন চক্ষু ও জীবনের চেয়েও প্রিয়, জীবনের চাইতে প্রিয় কোন জিনিস নেই অথচ আমার জীবন হতে শত গুণ বেশি প্রিয় তুমি।

উর্দু সাহিত্যের প্রধান কবি ডঃ আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল নবীপ্রেমের এক নিখাঁদ চিত্র অংকন করেছেন এভাবে- না ফুটিত যদি এ কুসুম কলি, করিত না কভু বুলবুলি গান, হাসিত না কভু ফুলের কলিরা, মাতায়ে নিখিল পুষ্পোদ্যান না আসিত যদি এ সাকী, বহিত না সুরা সুরার বাটি, তৌহিদ বীন বাজিত না কভু, বিশ্ব হত না খোদার ঘাঁটি।

সাধক কবি মীর্জা আসাদুল্লাহ্ গালিব আল্লাহ্ ও রাসুলের প্রতি তার ভক্তি ও প্রেমের চরম পরাকাষ্ঠা প্রকাশ করতে গিয়ে উঠেন- কি আনন্দ! কি আনন্দ! যখন তোমার কথা ভাবি তখন আমার আত্মার ঘর আলোকিত বেহেশতী বাগান। আল্লাহ্ আমাকে দাও অপার করুণা নবীর আদর্শে হোক আমার জীবন উজ্জীবিত।

ইউনুস আমীর বলেন, তোমার নামের দীপ জ্বেলে আমি জ্বলি নিজে, তোমার একত্ববাদ পবিত্র কোরআনে জ্বলে কী যে। তোমাকে স্মরণ করে নত হই, তোমার সমীপে তুমি ছাড়া কেউ নেই, প্রদীপ্ত আমার দীল দীপে।

আফগানিস্তানের শ্রেষ্ঠ জাতীয় কবি খোশহাল খান খটক লেখেন- হে রাসুল মুহাম্মদ মুস্তফা (সা:) আপনার নামের জন্য আমি যে কোরবান হতে চাই।

ফারসী সাহিত্যের আর এক বিখ্যাত কবি ফরিদুদ্দীন আত্তার রাসূল (সা:) এর শানে ১৪টি কাব্যগ্রন্থ প্রণয়ন করেন । তার কবিতার কিছু অংশ- তাঁর প্রশংসায় আল্লাহ্ই পঞ্চমুখ যে নামের সাথে মিশে আছে তাঁর নাম, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মুহাম্মদ সে তো সত্যবাদী আল আমীন, সমগ্র জগতের জন্যে শাশ্বত রহমত দুজাহানের শ্রেষ্ঠ মানব দ্বীন ও দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম সংগঠক। মুহাম্মদ এ বিশ্বের গৌরব তিনি মানবতার অনন্য শিক্ষক।

মরমী কবি লালন শাহ বিশ্বনবী হযরত (সা:) কে নিয়ে বেশ কিছু না’ত রচনা করেছেন যেমন- তোমার মত দয়াল বন্ধু আর পাবো না দেখা দিয়ে দীনের রাসূল ছেড়ে যেওনা। আমরা সব মদিনাবাসী ছিলাম যেমন বনবাসী তোমা হতে জ্ঞান পেয়েছি পেয়েছি সান্ত্বনা।

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামই রাসূল (সা;) কে নিয়ে সবচেয়ে বেশী কবিতা ও গান রচনা করেছেন। তার রচনার কিছু অংশ - আসিছেন হাবিবে খোদা, আরশ পাকে তাই উঠেছে শোর, চাঁদ পিয়াসে ছুটে আসে আকাশ-পানে যেমন চকোর, কোকিল যেমন গেয়ে ওঠে ফাগুন আসার আভাস পেয়ে, তেমনি করে হরষিত ফেরেশতা সব উঠলো গেয়ে। হে মদিনার বুলবুলি গো গাইলে তুমি কোন গজল, মরুর বুকে উঠলো ফুটে প্রেমের রঙিন গোলাপ- দল।

ইসলামী রেনেঁসার কবি ফররুখ আহমদ রাসূল (সা:) কে নিয়ে লিখেছেন এভাবে- কে আসে কে আসে সাড়া পড়ে যায় কে আসে কে আসে নতুন সাড়া, জাগে সুষুপ্ত মৃত জনপদ, জাগে শতাব্দী ঘুমের পাড়া। হারা সম্বিত ফিরে দিতে বুকে, তুমি আনো প্রিয় আবহায়াত, জানি সিরাজাম মুনীরা তোমার রশ্মিতে জাগে কোটি প্রভাত।

ইংরেজ কবি জন কিটস্ বলেন, ‚পৃথিবীর যা কিছু মঙ্গলময়, যা কিছু মহৎ ও সুন্দর সবই নবী মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।“

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেষ নবীকে তিঁনি ‘মহাপুরুষ’ ও ‘প্রচন্ড সূর্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। ধর্মের অনুরাগ’ গ্রন্থে তিনি বলেন-“মানুষের ধর্মবুদ্ধি খন্ড খন্ড হয়ে বাহিরে ছড়িয়ে পড়েছিল, তাকে তিনি (মুহাম্মদ সাঃ) অন্তরের দিকে, অখন্ডের দিকে নিয়ে গিয়েছেন। বিশ্বের পরম দেবতাকে একটি বিশেষ রূপে, একটি কোন, বিশেষ স্থানে আবদ্ধ করে না রেখে তিনি সেই মহাপূণ্যের দ্বারকে সমস্ত মানুষের কাছে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন”।

প্যারাডাইজ লস্টের কবি জন মিল্টন ঃ কনষ্ট্যান্টাইনের কালের বহু আগে অধিকাংশ খ্রীষ্টান তাদের মতবাদ ও আচরণ উভয়েরই আদিম শুচিতা ও ন্যায়পরায়নতা অনেক খানি হারিয়ে ফেলেছিল। পরবর্তী কালে যখন চার্চের সমৃদ্ধি সাধন হয়েছে তারা তখন সম্মান আর অরাজকীয় ক্ষমতার প্রেমে প্রোথিত এবং খ্রীষ্ট ধর্ম ভরাডুবির প্রান্তে উপনীত। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর্বিভুত হলেন ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে এবং পৌত্তলিকতাকে নিশ্চিহ্ন করলেন এশিয়া আফ্রিকা ও মিশরের অনেকাংশ থেকে, যার সর্বাংশেই আজ পর্যন্ত এক পবিত্র আল্লাহর উপাসনা প্রতিষ্ঠিত। প্রবক্তাদের মনের উপর মুহাম্মদ(সাঃ) এর ধর্মশক্তির সবচেয়ে সন্দেহাতীত প্রমান পাওয়া যাবে, অতীতে যে অন্যান্য সকল বিশ্বাসের জরাজীর্ণ অবস্থার ও সৃষ্টিকে স্রষ্টার আসনে স্থাপন করার অভিজ্ঞতা লাভে ইসলাম যদিও যথেষ্ট প্রাচীন, তবুও তাঁর(সাঃ) অনুসারীরা শেষ পর্যন্ত তাদের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার লক্ষ্যকে মানুষের ইন্দ্রিয় ও কল্পনার স্তরে নামিয়ে আনাকে ঠেকিয়েছে এবং কোনো দৃষ্টিগোচর মূর্তি দ্বারা উপাস্যের জ্ঞানালোকিত ভাবরূপকে কলঙ্কিত না করেই তারা গোঁড়ামী ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত থেকেছে। আমি বিশ্বাস করি এক আল্লাহকে এবং আল্লাহর প্রেরিত মুহাম্মদ (সাঃ)কে। এই হল ইসলামিত্বের সহজ অপরিবর্তনীয় ঘোষণা। (জগৎ গুরু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ ৮৫-৮৬ পৃঃ)

ভোজরাজ তার নিজস্ব শ্লোকে মহানবী (সঃ)কে “মহাদেব নৃপতি” নামে উল্লেখ করেছেন।” মহাদেব নৃপতি” অর্থ হচ্ছে দেবতাদের সর্দার অর্থাৎ নবী রাসূলদের সর্দার। ভোজরাজ আরও বলেছেন, হে মরুস্থল নিবাসী মহাপুরুষ, মহাদেব নৃপতি তোমায় প্রনাম জানাই। তুমি শয়তানকে সরিয়ে রাখবার উপায় জান। তুমি ম্লেচ্ছ বিরোধী নও। আমি তোমার আদেশ পালনকারী। তোমার পায়ে আমাকে স্থান দাও। এ থেকে বুঝা যায় চৌদ্দশো বছর পূর্ব হতে যারা মহানবীকে ভুল বুঝে পরে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে তবে বর্তমান কালের অমুসলিম মনীষীদের ক্ষেত্রে নিশ্চয় উল্টোটা হবে না।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: