বাংলা সাহিত্যের মুসলিম জাগরণের দিকপাল : সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:০৬

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী : সংগৃহীত ছবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী : সংগৃহীত ছবি


বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকে মুসলিম জাগরণের অন্যতম দিকপাল ছিলেন সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী । ব্রিটিশ ভারতের পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার বানীকুঞ্জ গ্রামের ভেষজ চিকিৎসক পিতা আব্দুল করিম খন্দকার এবং মাতা নূরজাহান খানমের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন তিনি । মুসলিম পুনর্জাগরণে তাঁর সমসাময়িক বিশিষ্ট ইসলামী সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ আল্লামা শিবলী নোমানী ও আল্লামা ইকবাল কর্তৃক বেশ প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন যা তাঁর রচনায় স্পষ্ট ভাবেই ফুটে উঠেছে ।

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী জন্মগ্রহণ করেন – ১৮৮০ সালের ১৩ জুলাই, বানীকুঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ।

ইসমাইল হোসেন সিরাজীর শিক্ষা জীবন – সিরাজগঞ্জ বনোয়ারী লাল হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তিনি ফার্সি, সংস্কৃত ব্যাকরণ ও সাহিত্য এছাড়া বেদ, উপনিষদ, মনুম্মৃতি প্রভৃতি অধ্যয়ন করেছিলেন ।

নামের শেষে তিনি সিরাজী উপাধি ব্যবহার করতেন – জন্মস্থানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য (সিরাজগঞ্জের সিরাজী) । সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর প্রথম রচনার নাম – ‘অনল প্রবাহ’ ।

’অনল প্রবাহ’ কাব্য গ্রন্থের জন্য লেখককে – দু’বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল ।

ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচিত ‘অনল প্রবাহ’ কাব্যের কবিতাগুলোর বিষয়বস্তু – মুসলিমদের দুরবস্থা ও অধ:পতনের বর্ণনার মাধ্যমে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ ।

’অনল প্রবাহ’ কাব্যের কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে – অনল প্রবাহ, তূর্যধ্বনি, মূর্চ্ছনা, বীর – পূজা, অভিভাষণ : ছাত্রগণের প্রতি, মরক্কো-সঙ্কটে প্রভৃতি (মোট ৯টি কবিতার সমন্বয়ে রচিত) ।

কারাগারে থাকাকালীন তিনি যে গ্রন্থটি রচনা করেন ‘কারা কাহিনী’ নামক প্রবন্ধ গ্রন্থ (গ্রন্থটি মাসিক সাধনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়) ।

স্বাধীনতা ও জাতীয় মুসলিম জাগরণের জন্য কবিতা লিখে প্রথম বিট্রিশদের রোষানলে পড়ে কারাবরণে বাধ্য হয়েছিলেন – সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ।

তাঁর জীবদ্দশায় বক্তৃতা ও সভাস্থলে ব্রিটিশ সরকার সর্বমোট ১৪৪ ধারা জারি করেছিল – ৮২ বার ।

ইসমাইল হোসেন সিরাজী যে যে পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশ করতেন – আল-এসলাম, প্রবাসী, কোহিনূর, সোলতান, সওগাত, মোহাম্মদী, নবযুগ, নবনূর প্রভৃতি ।

দামেস্কোর মুসলিম বীর তারিক বিন জিয়াদ ও স্পেনের সম্রাট রডারিকের যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে তিনি রচনা করেন – ‘স্পেন বিজয়’ কাব্যটি ।

মহাকাব্যের ধারায় রচিত ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ‘স্পেনবিজয়’ কাব্যটি প্রকাশিত হয় – ১৯১৪ সালে ।

ইসমাইল হোসেন সিরাজী ‘আল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল মিশনের সদস্য হয়ে তুরস্কের পক্ষে যে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন – বলকান যুদ্ধে (১৯১২ সালে সংঘটিত হয়েছিল) ।

তুরস্কের সুলতান সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে উপাধি প্রধান করেন – ‘গাজী’ উপাধি ।

’সঙ্গীত-সঞ্জীবনী’ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর যে শ্রেণির রচনা – গানের সংকলন (৩৩ টি গানের সমন্বয়ে রচিত) ।

রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলী গীতিকাব্য অনুসারে ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচনা করেন – ‘প্রেমাঞ্জলি গীতিকাব্য (১২৮ টি গানের সংকলন) ।

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচিত অন্যান্য কাব্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – উচ্ছাস (১৯০৭), উদ্ধোধন (১৯০৭), নবউদ্দীপনা (১৯০৭), মহাশিক্ষা মাহাকাব্য প্রভৃতি ।

তিনি বঙ্গিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসের জবাব হিসেবে রচনা করেন – ‘রায়নন্দিনী’ উপন্যাস । ’ঈশা খাঁ ও স্বর্ণময়ী’ যে উপন্যাসের চরিত্র – ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ‘রায়নন্দিনী’ উপন্যাসে ।

মুসলিম বীর ঈশাখাঁর রূপ লাবণ্যের মুগ্ধ হয়ে ভালবেসে স্বর্ণময়ী ‍নিজধর্ম ত্যাগ করে তাকে বিবাহ করে, এছাড়া বহুতর উচ্চশ্রেণির ব্রাহ্মণ পরিবার ক্রমশ: ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন প্রভৃতি বিষয়বস্তু – রায়নন্দিনী উপন্যাসের । ইসমাইল হোসেন সিরাজীর রায়ন্দিনী উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় – ১৯১৫ সালে । সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে – তারাবাঈ (১৯১৮), নূরউদ্দিন (১৯১৯), জাহানারা (১৯৩১), বঙ্গ ও বিহার বিজয় (১৮১৯) ফিরোজা বেগম (১৯১৮) প্রভৃতি । ”হিন্দু মুসলমানের অন্তরে সমভাবে দেশপ্রেম সৃষ্টির কাজে যাঁহারা আমাদের পথ প্রদর্শন করিয়াছেন নি:সন্দেহে সিরাজী সাহেব তাহাদের অগ্রণী” সিরাজী সম্পর্কে উক্তিটি করেছেন – নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ।

”মুসলামনাদের বিশ্ব সভ্যতায় স্থান নিতে হলে তাদের ডান হাতে কুরআন আর বাম হাতে বিজ্ঞান নিয়ে অগ্রসর হতে হবে” উক্তিটি করেছেন – ইসমাইল হোসেন সিরাজী ।

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন – খিলাফাত ও অসহযোগ অন্দোলনে সাথে (১৯১৯-১৯২৩ সাল পর্যন্ত) ।

”পুরুষ সামাজের দেহ, আর মাতৃজাতি সেই দেহের আত্মা” উক্তিটি করেছেন – ইসমাইল হোসেন সিরাজী ।

’স্বজাতি প্রেম’ ও ’তুর্কি নারী জীবন’ ইসমাইল হোসেনর যে শ্রেণির রচনা – প্রবন্ধ গ্রন্থ । তাঁর অন্যান্য প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে – আদব কায়দা শিক্ষা, স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা, সুচিন্তা, মহানগরী কর্ডোভা প্রভৃতি ।

”আর ঘুমিও না নয়ন মেলিয়া উঠবে মোসলেম উঠবে জাগিয়া আলস্য জড়তা পায়েতে ঠেলিয়া” মুসলিম পুনর্জাগরণের এই উক্তিটি করেছেন – সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী (অনলপ্রবাহ কাব্যের প্রথম অনুচ্ছেদে) ।

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর অপ্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে – আবে হায়াৎ পুষ্পাঞ্জলি, সুধাঞ্জলি, গৌরব কাহিনী প্রভৃতি । ”বঙ্গভাষাকে হিন্দুর ভাষা মনে করিও না—-মাতৃভাষা বাংলাকে সম্পূর্ণরূপে আয়ত্ত করিতে সযত্ন হও “ মাতৃভাষা বাংলা সম্পর্কে উক্তিটি করেছেন – ইসমাইল হোসেন সিরাজী । মুসলিম নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী পরলোকগমন করেন – ১৭ জুলাই, ১৯৩১ সালে (মাত্র ৫১ বছর বয়সে) ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: