দুই বন্ধু - শেখ সাদী

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৮ আগস্ট ২০২৩ ১২:১৭

দুই বন্ধু - শেখ সাদী : সংগৃহীত ছবি দুই বন্ধু - শেখ সাদী : সংগৃহীত ছবি


দেশের নাম খােরাশান। ভারি সুন্দর এক দেশ। সেই দেশে ছিল দুইজন সাধু ব্যক্তি। একজন ছিল বেশ মােটাসােটা । খেতে খুব পছন্দ করত । দিনে দুইবার ভালাে ভালাে খাবার পেটপুরে না-খেলে তার শান্তি হত না। অন্যজন ছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা। শরীর ছিল লিকলিকে। হাড়-জিরজিরে দেহ। খাওয়াদাওয়া একদম পছন্দ করত না। দুইদিন পরে একদিন খেত সে। দুজনের আবার ভারি বন্ধুত্ব।

একবার তারা একসঙ্গে দেশভ্রমণে বের হল। পাহাড়-পর্বত ছাড়িয়ে, বন-জঙ্গল পেরিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল তারা। নতুন দেশ, নতুন মানুষ—নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা । খুব ভালাে লাগছে তাদের। আনন্দে আনন্দে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলাে।

এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন নতুন এক শহরে এল তারা। শহরে ঢােকামাত্র গ্রেফতার করা হল তাদের । বাদশাহ'র সেপাইরা ধরে নিয়ে গেল কাজির দরবারে। বিচারে রায় দেয়া হল—এরা গুপ্তচর।

সাধু দুইজন বলতে থাকে : আমরা নিরপরাধ, আমাদের কোনাে দোষ নেই। আমরা দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমরা নিরীহ মানুষ । কিন্তু, কেউ তাদের কথা শুনল না। তাদের দুজনকে বন্দি করে রাখা হল একটা চোর-কুঠুরিতে । দরজা বন্ধ করে দেয়া হল। না-খেতে পেয়ে ওরা যেন মারা যায়—এর চেয়ে ভয়ংকর শাস্তি আর কী হতে পারে!

কিছুদিন পরে অবশ্য প্রমাণ পাওয়া গেল, সেই দুজন আসলে গুপ্তচর নয়। তারা সাধু ব্যক্তি। মনের আনন্দে বেরিয়েছে দেশ ঘুরতে। বাদশাহ'র লােকেরা গেল বন্দিদের মুক্ত করতে । দরজা ভেঙে উদ্ধার করতে হবে ওদের। কিন্তু এতদিন না-খেয়ে থাকলে মানুষ তাে বাঁচতে পারে। নিশ্চয়ই ওরা বেঁচে নেই । দরজা খুলে অবাক হল সেপাইরা। একজন তখনও বেঁচে আছে ।

যে বেচারা হাড়-জিরজিরে, রােগা-পটকা দেহ সে-ই মারা যায়নি। মােটা-জন পটল তুলেছে। সকলেই অবাক।

তখন একজন জ্ঞানীলােক বলল: এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মােটা লােকটাই মারা যাবে। কারণ, সে ছিল ভােজনরসিক। খাবার ছাড়া তার একমুহুর্ত চলে না। খাবার না-পেয়ে সে মারা গেছে। কিন্তু শুকনাে লােকটা খুব সংযমী। না-খেয়ে থাকার অভ্যেস তার আছে। সে বন্দি কারাগারে। অনশন পালন করেছে।

জ্ঞানীলােকটি তখন সকলের উদ্দেশে বলল : যারা অভাবের মধ্যে দিন কাটায় তারা অভাবকে সহ্য করতে পারে। কিন্তু যারা ভােগবিলাসে জীবন কাটায় তারা সামান্য বিপদেই কাতর হয়ে পড়ে। এমনকি মারাও যায়। ওদের দুজনের ভাগ্যে সেরকম ঘটনা ঘটেছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: