প্রার্থনার ভাষা - আল মাহমুদ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৭ আগস্ট ২০২৩ ০৮:২৭

প্রার্থনার ভাষা - আল মাহমুদ : সংগৃহীত ছবি প্রার্থনার ভাষা - আল মাহমুদ : সংগৃহীত ছবি


একটু জানান দাও হে প্রভূ, তুমি হাল ধরে আছো আমার মত এক
টলটলায়মান দিগভ্রান্ত নৌকোর।
জানান দাও
তুমি আছ এক ছেঁড়াখোড়া আর সাত তালিমারা পালের ফুলে ওঠা
অদৃশ্য বাতাস হয়ে।

আমি পাড়ি দিয়ে এসেছি পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গের উল্টো দিক থেকে
সময়ের উল্টো দিক থেকে আমার যাত্রা।
আমি পেওছুব তোমার নির্ধারিত কিনারে। তোমার নির্বাচিত উপত্যকায়।
আমার আয়োজন
তুমি তো জানোই কেমন অকিঞ্চিতকর। আর তোমার ছায়া কত
দিগন্ত বিস্তারী।

আমি পেরিয়ে এসেছি ঢেউয়ে ঢেউয়ে অপেক্ষমান শত সহস্র ঝাঁক বাঁধা
অতিকায় হাঙরের মুখ। তারা বার বার কামড়ে কামড়ে বিক্ষত করেছে
আমার পাটাতন। আমি দুহাতে লোনা পানির স্রোত ঠেকিয়ে
মেরামত করেছি আমার অমার অর্ধমগ্ন তলদেশ।
তোমার কাছে পৌছার অদম্য ইচ্ছা আমাকে দিয়েছে
সব ছিদ্র বন্ধ করার নিগূঢ় শক্তি।

আমাকে খুবলে খেতে চেয়েছিল যে দরিয়ার দাঁতাল দানবেরা
ভুস ভুস শব্দে তাদের ব্যর্থ নিঃশ্বাসের পানিতে আমার
সর্বাঙ্গ সিক্ত করে তারা হারিয়ে গেছে
অথৈ লবনের সায়রে।
এখন দ্যাখো বিজয়ীর মত আমার মাস্তুল ভেসে উঠেছে।
প্রতিটি সর্বগ্রাসী তুফানের অন্তিম আঘাতের পর। আমি বোবা হয়ে গেলেও
কথা বলার মিনতিতে আমার বক্ষস্থল স্ফীত।
এলাহি, আমাকে ভাষা দাও প্রভু। মিনতি করার ভাষা।

ক্ষমা প্রার্থনা এবং পাপ মোচনের শব্দ এখনও আমার অনায়ত্ত
আমার চাই প্রার্থনার ভাষা, যা কাব্য বা কান্না নয়। বরং
আত্মনিবেদনের মানবিক অনুতাপ। যেমন হযরত আদম তার
শরীরছেড়াঁ সঙ্গিনীকে নিয়ে অপরাধী কপাল বেহেশতের ধূলিতে
স্থাপন করে বলেছিলেন ক্ষমা প্রভু
একটিবারের মত ক্ষমা।
তিনি মেনে নিয়েছিলেন নির্বাসন। মেনে নিয়েছিলেন পৃথিবী
মেনে নিয়েছিলেন, শ্রম ঘাম কাম সন্তান সংসার, রোগ এবং পুত্রশোক।
কিন্তু আমি সেই আদি পিতা-মাতার অবহেলার পুত্র
আমার কাছে পৃথিবী দুঃসহ
প্রতিটি গ্রহ, তারকা, উদয়াস্ত দুঃসহ।
দুঃসহ মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি।
মানুষের আগ্রহ যেখানে-সেখানে পাড়ি জমাতে সক্ষম, সর্বত্র।

মানুষের নভোযান, খেয়া আর প্রযুক্তি তাড়িত বিশাল যান্ত্রিক উৎক্ষেপ
সবি নিরর্থক স্বপ্নের জ্বালানিতে ব্যর্থতার সমুদ্রে সাঁতার মাত্র।
আমি চাই অন্য কিছু।
আমার গতি তুমি তো জানো প্রভু কোন দিকে ধাবমান!

আমার রক্তে-মাংসে সেই ফেলে আসা ‍চুম্বকের টান।
যেখান থেকে আমাদের পিতা-মাতা
কেবল জ্ঞানের লোভে, অমরতা ও আত্মতৃপ্তির আকাংখায়
একদা কানাকড়ি মূল্যে হেলায় হারিয়েছিলেন বেহেশত। সেই
মহাউদ্যানের টান আমার রক্তে, আমার মাংসে ও মজ্জায়।
দাও তাকে ফিরিয়ে আমায়।

প্রার্থনার ভাষা দাও প্রভু, নির্জ্ঞান আত্মসমর্পণের
সহজতা।
আমি কি পাড়ি দিয়ে যাচ্ছি না হাঙরসংকুল সমুদ্রের চেয়ে দুরুহ
যে আয়ু?
সেই দিন এবং রাত্রি?িউদয় আর অস্ত।
আঁধার এবং আলো। না
আলো আর অন্ধকার আর না। জ্বলুক তোমার নূরের দীপ্তি
যা ভেদ করে যায় পৃথিবীর উদবে লুকানো সমস্ত গলিত ধাতুর
সাতপরত পর্দা।
পৌঁছুতে চাই প্রভু তোমার সান্নিধ্যে
তোমার সিংহাসনের নীচে একটি ফুরফুরে প্রজাপতি হয়ে।
যার পাখায় আঁকা অনাদিকালের অনন্ত রহস্য।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: