এই কি কারবালা সেই? এই সেই স্থান?
এই সেই মহামরু? হেরিলে যাহারে
অশ্রু ঝরে দু’নয়নে কেঁদে ওঠে প্রাণ?
কত কথা পড়ে মনে, শিরায় শিরায়
প্রচণ্ড অনল-স্রোত হয় প্রবাহিত;
প্রাণের নিভৃত কক্ষে- হৃদয়ে- কন্দরে
কি যে এক শোক স্মৃতি হয় উচ্ছ্বসিত!
সেই স্থানে, কি বলিব বুক ফেটে যায়,
মুহাম্মদ মোস্তাফার (সা.) আদরের ধন,
ফাতেমার হৃদি-রত্ন নয়নের মণি,
বীরশ্রেষ্ঠ মোর্তযার স্নেহের নন্দন,
ইসলাম ধর্মের আলো, সৌন্দর্যের স্থান
হোসেন তাপস শ্রেষ্ঠ, আপন শোণিতে
প্রক্ষালিত মুসলেমের পাপতাপ রাশি
দিয়াছিলা ধর্মযুদ্ধে আপনাই প্রাণ,
স্মরিলে সে কথা আজি বিদরে হৃদয়।
এই কি কারবালা সেই? এই সে শ্মশান!
যাহার বালুকারাশি সিন্দুরের মত
হয়েছিল সুরঞ্জিত হোসেন শোণিতে।
যার প্রাণাধিক পুত্র আলী আকবর
‘‘পিপাসা,পিপাসা’’ বলে বিপক্ষের তীরে
দিয়াছিল আপনাই অমূল্য জীবন।
যাহার করুণ স্মৃতি রয়েছে জড়িত
মরুময় কারবালার প্রতি অনেক অনেক
বালুকণা সাথে যার হাহাকার ধ্বনি
স্বর্গের দেবতাগণ শুনিয়া সতত
মর্মাহত কেদে কেদে আকুল পরান।
এই কি কারবালা সেই ? যার বালুকণা
‘‘পিপাসা,পিপাসা’’ বলে উঠিছে কাদিয়া
দিবানিশি,বক্ষে যার আজিও অংকিত
শহীদের রক্তধারে বালুর উপরে-
‘‘পিপাসা,পিপাসা’’ যার প্রতপ্ত সমীর
‘‘পিপাসা,পিপাসা’’ বলে বেড়ায় ছুটিয়া
চারিদিকে সে উত্তপ্ত বালুর সাগরে।
ধ্বংসরূপী কারবালার ভীষণ প্রকৃতি
উম্মাদিনী বেশে করাঘাত করি-
‘‘হা হোসেন,হা হোসেন’’ বলিয়া কাতরে
কেদে কেদে বার বার উঠিছে চিৎকারি।
কারবালার প্রান্তরে সে শব্দ করুণ
হইতেছে মুখরিত,জানি না কখন
এ পিপাসা মিটে যাবে জনমের তরে।
মিটিবে কি? মিটিবে না সপ্ত সিন্ধু জলে।
সে কথা স্মরণে আজি শিহরে পরান।
এই কি কারবালা সেই ? এই সে শ্মশান,
এই সেই মরুভূমি? সেই স্থান?
পিপাসা রাক্ষসী যেথা মূর্তিমতী হয়ে
‘‘পিপাসা,পিপাসা’’ বলে কদিছে চিৎকারি।
কত শত পান্থ হেথা গভীর বিষাদে
কদিতেছে হায় হায় করিয়া সতত,
স্মরি সেই অতীতের করুণ কাহিনী।
নাই সেই নাই কীয় পাপিষ্ঠ এজিদ
মূঢ়মতী,নাই সেই দুর্ধর্ষ সেনানী
উমর,হোর নাই,নাই ও বেদ্দুল্লা,
তাহাদের অত্যাচারে-গোর উৎপীড়নে
শহীদ হইয়া গেছে সবংশে হোসেন
‘‘পিপাসা,পিপাসা’’ বলে কারবালা প্রান্তরে,
তাহাদের মর্মান্তিক সে কাতার ধ্বনি
রয়েছে মিশিয়ে যেন দিবানিশি হায়
আজিও এ ফোরাতের কুল কুল তানে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: