ফাইল ছবি
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গতকাল একযোগে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রাজধানী জুড়ে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সারাদিনে অন্তত ১১ টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং তিনটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। কোনো বড় ধরনের হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও ঘটনায় শহরে নিরাপত্তা বজায় রাখতে ইতোমধ্যেই ব্যাপকতবে তৎপরতা বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাব যৌথ কার্যক্রম শুরু করেছে এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি ক্ষুন্ন করার যে কোনও চেষ্টা কঠোরতার সঙ্গে দমন করা হবে। পুলিশের নির্দেশে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর সব থানাকে টহল, নজরদারি ও গৌণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়াতে বলা হয়েছে—এ দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা এক মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় প্রথম বিস্ফোরণটি ভোররাতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ঘটে; ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংযোগ আছে। মিরপুর মডেল থানার ওসি সাজ্জাদ রোমান জানান, মোটরসাইকেলে এসে দুই ব্যক্তি ভবনের সামনে ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। সেই সময়ে মোহাম্মদপুরের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার মালিকানাধীন এক প্রতিষ্ঠানেও মোটরসাইকেল থেকে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টার ও ইবনে সিনা হাসপাতালের দিকে মোট চারটি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় মৌচাক, আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ বেতার, খিলগাঁও ফ্লাইওভার এলাকা ও মিরপুর শাহ আলী মার্কেট সংলগ্ন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটে; রাত ১০টার দিকে ফ্লাইওভার থেকে আরেকটি ককটেল নিক্ষেপ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। দিনের শেষ বিস্ফোরণটি রাত ১১টা ১০ মিনিটে বাংলামোটরে এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ঘটে; এতে এক পথচারী সামান্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন জানান। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের পর স্থানীয়রা মোটরসাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুই জনকে ধাওয়া করে আটক করে—পরে আরও তিনজনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশি সূত্রে জানা গেছে, আগের দিন কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রালে ও মোহাম্মদপুরের সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের বাসভবনের সামনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ভোরে শাহজাদপুর ও মেরুলবাড্ডায় দুটি বাসে আগুন দেয়া হয় এবং সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে আরেকটি বাসে আগুন লাগানো হয়। তৎপরতায় ডিএমপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকার আশেপাশে সব ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও জনপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জানিয়েছে, হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে তারা পাল্টা গোয়েন্দা তৎপরতা চালাচ্ছে ও নজরদারি বাড়িয়েছে। ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী প্রকাশ্যে বলে ফেলেছেন তারা তাদের নেতাদের জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত—এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সোমবার পৃথক অভিযান চালিয়ে আড়াই ডজনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ককটেল হামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ২৮ বছর বয়সী এক ছাত্রলীগ সদস্যকেও ডিএমপি আটক করেছে।
সরকার ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় অটল থাকার বার্তা দিয়েছে এবং ঢাকার গির্জা, মন্দির, মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রতিটি চেষ্টা দ্রুত ও কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে; জননিরাপত্তা, জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সুরক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার।’
ঘটনাগুলো এমন সময়ে ঘটেছে যখন রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও বিএনপি–আলোচিত একটি সংগঠন আগামী ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ ঘোষণা করেছে—এই প্রেক্ষিতেই রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তা সভায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সব থানাকে টহল, অতিরিক্ত আলোকসজ্জা, সিসিটিভি তদারকি ও জরুরি প্রতিরোধ ব্যাবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেন; রেলওয়ে, মেট্রো ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোতেও বিশেষ সতর্কতা তোলা হচ্ছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: