সুন্দরবনে আগুন
সুন্দরবনে আবারও আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুম মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সুন্দরবনে আগুন লাগা যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনে সাধারণত আগুন লেগে থাকে বজ্রপাত অথবা প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে গাছে গাছে সংঘর্ষের কারণে। বন থেকে মধু, গোলপাতা, সুন্দরী গাছ আহরণরত ব্যক্তিদের ফেলে আসা বিড়ি-সিগারেটের টুকরা থেকেও আগুন লাগা বিচিত্র নয়। তবে তা খুব কমই ঘটে থাকে।
প্রতিবছরই বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্গত সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী কোনো সংঘবদ্ধ চক্রের হাত রয়েছে। এবার নিয়ে গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে অন্তত ২৫ বার আগুন লেগেছে। ফলে, প্রতিবছরই পুড়ছে বনের নতুন নতুন এলাকা। এবারের আগুন লেগেছে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির এলাকায়। আগুন প্রায় ৪ একর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল, ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড, নৌ ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের সহায়তায় আগুন বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে।
বন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, সর্বশেষ অগ্নিকা-সহ আগের ২৪টি ঘটনায় সুন্দরবনের প্রায় ৮৫ একর বনভূমির বিভিন্ন ধরনের গাছপালা পুড়ে গেছে। ধ্বংস হয়েছে জীববৈচিত্র্য। স্থানীয় গ্রামবাসীদের ভাষ্য, প্রধানত মাছ চাষের জন্যই প্রতিবছর দুষ্টচক্র আগুন লাগিয়ে থাকে সুন্দরবনে। এ নিয়ে থানায় মামলা দায়েরসহ গ্রেপ্তারের খবরও আছে। তবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছেই।
সুন্দরবন একদিকে যেমন বাংলাদেশের গর্ব, অন্যদিকে বিশ্ব ঐতিহ্য বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশও বটে। আর তাই বন ও জলদস্যুদের উৎপাত এবং দুর্বৃত্তদের বারবার আগুন লাগানোর বিষয়টি উদ্বেগজনক বৈকি। চক্রটি শুকনো মৌসুমে বনে আগুন লাগিয়ে প্রশস্ত করে মাছ চাষের পথ। এর পাশাপাশি বনের জায়গা দখল করাও আরেকটি উদ্দেশ্য। বেড়েছে বনদস্যুদের উৎপাতও। গত কয়েক বছর ধরে এসব অপকর্ম চলে এলেও এতদিন বন বিভাগ থেকে প্রায় কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
গত বছর প্রথম খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষকের উদ্যোগের প্রেক্ষিতে রাজাপুর গ্রামের কয়েকজনকে আসামি করে সুনির্দিষ্ট মামলা করায় আদালত জারি করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সুন্দরবনে বারবার আগুন লাগার পেছনে কিছু মানুষের দুরভিসন্ধি ও হঠকারিতাই প্রধানত দায়ী। এর পাশাপাশি চোরা শিকারিদের বিষটোপ দিয়ে বা ফাঁদ পেতে বাঘ ও হরিণ শিকার তো চলছেই। তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
বন না থাকলে একদিকে যেমন বাঘ, চিতল হরিণসহ অমূল্য বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে; অন্যদিকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন হবে জনপদ ও বসতি। সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকার গৃহীত বিবিধ পদক্ষেপের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ড্রোনসহ স্মার্ট প্যাট্রোলিং সিস্টেম, যা মূলত স্পেশিয়াল মনিটরিং এ্যানালাইজিং অ্যান্ড রিপোর্টিং টুল।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্মার্ট প্রযুক্তির আওতায় ব্যবহৃত হচ্ছে প্যাথেরা নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রস্তুতকৃত অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা। বন ও বন্যপ্রাণী সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও অপরাধ সম্পর্কিত তথ্যাদিও সংগ্রহ করা হয়। বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার পাশাপাশি বন সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের ধরতেও সহায়ক হতে পারে এই ব্যবস্থা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: