সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সূচকে আরও দুই ধাপ নেমে গেল বাংলাদেশ

মুনা নিউজ ডেস্ক | ৪ মে ২০২৪ ০৯:১২

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবনমন চলছেই। এবার গত বছরের তুলনায় আরও দুই ধাপ নেমে গেছে। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ২৭ দশমিক ৬৪ স্কোর পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৬৫ তম। যেখানে ২০২৩ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৩ তম। স্কোর ছিল ৩৫ দশমিক ৩১।

৩ মে, শুক্রবার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২৪ সালের এই সূচক প্রকাশ করেছে।

রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনি সুরক্ষা, সামাজিক ও নিরাপত্তা—এই পাঁচ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক তৈরি করে আরএসএফ। গত বছরের তুলনায় সামাজিক ও নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকলেও বাকি তিনটি ক্ষেত্রে এবার অবনমন হয়েছে।

আরএসএফের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের বড় অবনমন ঘটেছিল ২০২২ সালে। ২০২১ সালের তুলনায় ওই বছর সূচকে বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনমন হয়। পরের বছর আরও এক ধাপ পেছায় বাংলাদেশ। সে হিসাবে, ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তিন বছরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবনমন ঘটল ১৩ ধাপ। অর্থাৎ ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫২ তম থেকে ১৬৫ তম অবস্থানে নেমে গেল বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে আরএসএফ বলেছে, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি নাগরিকের মধ্যে এক–পঞ্চমাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাদের সংযোগ সামান্যই। এ দেশে তথ্য প্রবাহে ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোর ভূমিকা বাড়ছে।

আরএসএফের মতে, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতার সরকারি প্রচার–প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ভূমিকাও একই। ব্যক্তি মালিকানায় ৩ হাজার ছাপা পত্রিকা (দৈনিক ও সাময়িকী), ৩০টি রেডিও স্টেশন, ৩০টি টিভি চ্যানেল ও কয়েকশ নিউজ পোর্টাল। এর মধ্যে সরকারপন্থী সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল সময় টিভি ও একাত্তর টিভি খুব জনপ্রিয়। স্বাধীন অবস্থান নিয়ে চলা বা বিরোধীদের মালিকানায় কোনো টিভি চ্যানেল বর্তমানে নেই। যদিও শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার নির্দিষ্ট মাত্রায় স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতি মেনে চলে।

আরএসএফ বলছে, ক্ষমতাসীন দলের কর্মী–সমর্থকেরা পছন্দ না হলেই সাংবাদিকদের ওপর প্রায়ই শারীরিক হামলা চালায়। কোনো সাংবাদিককে চুপ করিয়ে দিতে বা সংবাদমাধ্যম বন্ধ করতে বিচারিক হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের বৈরী পরিস্থিতিতে সরকারি ভাষ্যকে চ্যালেঞ্জ করে এমন বিষয় সম্পাদকেরা সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে যান।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) করা হয়েছে, সেটির সমালোচনা করে আরএসএফ বলেছে, এই আইন সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের অন্যতম কঠোর আইন। বিশেষত, এই আইনে পরোয়ানা ছাড়াই অনুসন্ধান এবং গ্রেপ্তার; ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি জব্দ; নির্বিচারে তথ্যের উৎসের গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং ‘সরকারের অবমাননা’ বলে বিবেচিত তথ্য প্রকাশকারী যে কোনো সাংবাদিকের ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই পরিবেশে সম্পাদকেরা নিয়মিত সেলফ সেন্সর করেন।

এ ছাড়া, বাংলাদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমের বেশির ভাগই এ দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যে আত্মপ্রকাশ করা বড় ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রিত। তাঁরা নিজেদের সংবাদমাধ্যমকে দেখেন প্রভাব বিস্তার ও মুনাফা তৈরির হাতিয়ার হিসেবে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সম্পাদকীয় স্বাধীনতা বজায় রাখার চেয়ে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন।

বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ইস্যুগুলোও মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে খুব একটা প্রতিফলিত হয় না।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে এবারও শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। দেশটির স্কোর ৯১ দশমিক ৮৯। নরওয়ের পরেই রয়েছে যথাক্রমে— ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও ফিনল্যান্ড।

সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া (১৮০ তম)। দেশটির স্কোর ১৬ দশমিক ৬৮। সূচকে খারাপের দিক দিয়ে দ্বিতীয় সিরিয়া (১৭৯ তম), তৃতীয় আফগানিস্তান (১৭৮ তম), চতুর্থ উত্তর কোরিয়া (১৭৭ তম) এবং পঞ্চম ইরান (১৭৬ তম)।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এবারের সূচকে ভারতের দুই ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। ১৫৯ তম অবস্থানে আছে দেশটি। তবে পাকিস্তান ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে, দেশটির অবস্থান ১৫২ তম, যদিও গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ অবনমন হয়েছে।

এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা ১৫০ তম, মালদ্বীপ ১০৬ তম, ভুটান ১৪৭ তম ও নেপাল ৭৪ তম অবস্থানে রয়েছে। সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৫৫ তম, রাশিয়ার ১৬২ তম এবং চীনের অবস্থান ১৭২ তম।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: