এমভি আবদুল্লাহ থেকে সোমালি জলদস্যুরা জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হলে জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে এ যোগাযোগে আলোচনার দুয়ার খুলল বলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ আশ্বস্ত হয়েছিল। শেষ যোগাযোগ হয়েছিল ২০ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে। কিন্তু এরপর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও আর যোগাযোগ করেনি সোমালি জলদস্যুরা। এতে থমকে রয়েছে উভয় পক্ষে আলোচনার বিষয়টিও।
এ বিষয়ে জাহাজ মালিকপক্ষের মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ২০ মার্চ দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের পর তারা গেল তিন দিনে আর যোগাযোগ করেনি। উভয় পক্ষ পরস্পরকে আস্থায় নিতে একটু সময় নেয় এসব ক্ষেত্রে।
এদিকে গত তিন দিন দস্যুরা যোগাযোগ না করায় উদ্বিগ্ন ওই জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের পরিবারের সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ একসঙ্গে দ্রুত কাজ করে খুব তাড়াতাড়িই এই নাবিকদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করবেন—এটাই তাঁদের চাওয়া।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনুর বেগম বলেন, ‘মালিকপক্ষের কাছে আমার আকুল আবেদন, আমার একমাত্র অবলম্বন আতিককে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার।’
তথ্যমতে, সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি স্থানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেভাল ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ২১ মার্চ দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে ইইউ নেভাল ফোর্স এক্সে (সাবেক টুইটার) এই তথ্য প্রকাশ করার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। এর মধ্য দিয়ে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজে অভিযান পরিচালনার বিষয়টি আবার সামনে আসে। এর আগে ভারতীয় নৌবাহিনী ও সোমালিয়ার পুলিশও একইভাবে সোমালি দস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নিলে তাতে আপত্তি আসে জাহাজ মালিকপক্ষ ও বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে। বিষয়টি ওই অবস্থাতেই রয়েছে বলে জানান জাহাজ মালিকপক্ষের মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলাম।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপার্স ইউনিয়নের সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ হোসাইন জানান, জাহাজ ও ২৩ নাবিক জিম্মির বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। নাবিকদের ওপর যাতে কোনো ধরনের আঘাত না আসে সেভাবে বিষয়টি সমাধান করতে হবে।
এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি দশার ৯ দিনের মাথায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগ করেছিল। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জলদস্যুদের সঙ্গে মালিকপক্ষের ফোনে কথা হয়েছিল। এরপর তিন দিন যোগাযোগ না করার বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হতে কিছুটা সময় লাগবে। এ কারণে হয়তো কিছুটা সময় নিচ্ছে দস্যুরা।
জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রাম বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিকের জিম্মি দশার ১২দিন অতিবাহিত হয়েছে। ১৬ মার্চ রাত ৮টায় এক নাবিকের সঙ্গে মালিকপক্ষের আলাপে জাহাজের সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছেন বলে তথ্য দিয়েছিলেন জাহাজের কেএসআরএমের মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলাম। ২০ মার্চের আলাপেও নাবিকেরা সুস্থ ও নিরাপদে থাকার বিষয়টি জানা যায়। কিন্তু এরপর গেল তিন দিনে নাবিকদের বিষয়ে আর কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষের কাছে।
এর আগে ১৪ মার্চ রাত ৮টার দিকে সোমালিয়ার গ্যারাকাদ উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল (১ নটিক্যাল মাইল সমান ১ দশমিক ৮৫২ কিলোমিটার) দূরে দস্যুরা ছিনতাইয়ের পর প্রথম জাহাজটি নোঙর করে। পরে নোঙর তুলে ১৫ মার্চ গ্যারাকাদ উপকূল থেকে ৪৫ থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তর দিকে অবস্থান নেয়। উপকূলবর্তী গদবজিরান নামক স্থান থেকে মাত্র ৪ নটিক্যাল মাইল দুরে জাহাজটি সর্বশেষ অবস্থান ছিল ১৫ মার্চ রাত ৮টায়।
উল্লেখ্য, ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে ১২ মার্চ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। সেই থেকে জিম্মি অবস্থায় রয়েছে জাহাজের ২৩ নাবিক।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: