বাংলাদেশের অর্থনীতি ভুল দিকে চলছে মনে করে ৭০ শতাংশ মানুষ। ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করে সামাজিকভাবে বাংলাদেশ সঠিক পথে আছে। আর বাংলাদেশের রাজনীতি সঠিক পথে চলছে এমন ধারণা পোষণ করে ৩৯ শতাংশ মানুষ।
দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত এক সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে আসে। 'দ্য স্টেট অফ বাংলাদেশ'স পলিটিক্যাল গভর্ন্যান্স, ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি' শিরোনামের এই সমীক্ষা প্রতিবেদনটি ২৯ আগস্ট, মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে।
২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চলা এই সমীক্ষায় অংশ নেয় বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মোট ১০,২৪০ জন নারী ও পুরুষ। এর আগে ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালেও একই বিষয়ে সমীক্ষা করা হয়েছিল।
২০১৯ সালের তুলনায় এবারের সমীক্ষার তিনটি দিকেই মানুষের ইতিবাচক ধারণা অপেক্ষাকৃত কম, যা সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক মূল্যায়নের বহিঃপ্রকাশ।
অর্থনৈতিক অবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ইতিবাচকতা উচ্চ আয়-গোষ্ঠীর তুলনায় অনেক বেশি কমেছে। মাসে ৫,০০০ টাকা বা তার চেয়ে কম আয় করে এমন ৮৪% মানুষ ২০১৯ সালে জানিয়েছিল, তাদের মতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিকপথে আছে। ২০২২ সালে মাত্র ৩২% মানুষের কাছ থেকে এই উত্তর পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, ৫২% মানুষ আগের ইতিবাচক অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।
তুলনায় দেখা যায়, ৪০,০০০-৫০,০০০ হাজার টাকা মাসিক আয় যাদের, তাদের মাঝে এই পরিবর্তনের হার ৩০%, অর্থাৎ ২০১৯ সালে ৫৮% মানুষ ইতিবাচক ধারণা পোষণ করতো আর ২০২২ এ ইতিবাচক ধারণা করে ২৭% ।
জরিপের ৪৪% উত্তরদাতা জানিয়েছে, তাদের মতে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। মোট ৮৪% মানুষ জানিয়েছে, এই সমস্যা তাদের জীবন ও জীবিকার ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। ব্যবসায়িক মন্দা, বেকারত্ব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি সমস্যার কথাও জরিপে উঠে এসেছে।
২০২২ সালের এই জরিপে উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৪ শতাংশ জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এমন একটি পরিবেশ বিদ্যমান যেখানে একদল রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। ২০১৯ সালে এই একই মত পোষণ করেছিল ৭২% জনগণ। লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হল, ২০১৯ সালে ১১% মানুষ ভাবত, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব রাজনীতিতে নেতিবাচক। ২০২২ সালে এসে এমনটি ভাবছে ৩৪% মানুষ।
জরিপটি আরও বলছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি কমে যাচ্ছে। নিজেদের মাঝে শরণার্থীদের স্বাগত জানাবে- জনমনে এমন মনোভাব ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০১৮ সালে ৩৪%, সেখান থেকে ২০১৯ সালে ১৫% ও ২০২২ সালে ১৩% মানুষ শরণার্থীদের সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। ৪৪% মানুষ মনে করে, সরকার শরণার্থীদের জন্য যথেষ্ট করেছে ও করছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ (৭২%) বলেছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। সেতু নির্মাণের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন জরিপে অংশ নেয়া প্রায় অর্ধেক মানুষ (৪৭%)। অন্যদিকে ২৮% মানুষ কৃতিত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: