
গত শুক্রবার (২০ জুন) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উত্তপ্ত বৈঠকে ইসরায়েল ও ইরান এবং তাদের মিত্ররা সংঘাতের পেছনে একে অপরকে দায়ী করে। গভীর বিভাজনের মধ্যেও পরিষদ কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।
দশকের পর দশক সীমিত শত্রুতা চললেও এক সপ্তাহ আগে দুই দেশের মধ্যে তীব্র সংঘাত শুরু হয়। ইসরায়েলের দাবি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ইসরায়েলের জন্য হুমকি, তাই হামলা করছে। ইরানও অন্যদিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে পাল্টা আঘাত করছে।
ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাবানি 'প্রতিরোধমূলক আক্রমণ' ও 'অস্তিত্বের হুমকি'-র কারণ দেখিয়ে 'সন্ত্রাসী শাসকগোষ্ঠী' ইসরায়েলের আগ্রাসন ও আক্রমণকে ন্যায্যতা দেয়া ইসরায়েলের মিত্রদের নিন্দা জানান। তিনি ইসরায়েলকে 'নিরীহ মানুষ হত্যা করা' ও 'সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনকারী' দেশ বলে আখ্যায়িত করেন এবং ইসরায়েলের হামলায় নিহত ইরানি শিশুদের ছবিও তুলে ধরেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন ইরানকে 'ভুক্তভোগী হিসেবে ভান করার' অভিযোগে অভিযুক্ত করে বলেন, 'আপনি কী করে আপনার গণহত্যার এজেন্ডার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহানুভূতি আশা করেন?'
উভয়পক্ষের মাঝে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও অভিযোগ বিনিময়ে পূর্ণ নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একই সময়ে, শুক্রবার জেনেভায় ইরান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি মুখোমুখি বৈঠক হয়েছে। সংঘাত শুরু হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ।
যদিও আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে পারস্পরিক সমঝোতার সম্ভাবনা নেই।
নিরাপত্তা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য যুদ্ধ শেষ করে কূটনৈতিক সমাধানের ওপর একমত হলেও পুরো সময়টটুকুই দোষারোপ আর ঝগড়ায় কাটিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ডরোথি শিয়া ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের 'অস্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসের মূল উৎস' বলে উল্লেখ করে ইসরায়েলের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স উত্তেজনা কমানো ও আলোচনার ওপর জোর দিয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেঞ্জিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র পরিকল্পনার 'মিথ্যা রচনা' ছড়ানোর অভিযোগ এনে তাদের 'ইসরায়েলি হামলার সহযোগী' এবং 'বিপজ্জনক' আখ্যা দেন।
গত ১২ জুন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএএ) ঘোষণা করে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির লঙ্ঘন করেছে। সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ দ্রুত বাড়িয়েছে—যা পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
যদিও প্রতিবেদনটি সরাসরি উল্লেখ করেনি যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, তবু অন্যান্য উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম ধারণকারী দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্রধারী।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেঞ্জিয়া আইএইএএ প্রতিবেদনটিকে পক্ষপাতমূলক ও ভিত্তিহীন বলে অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে চীনের প্রতিনিধি ফু কং যুদ্ধবিরতি দাবি করে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন, তবে আইএইএএ বা যুক্তরাষ্ট্রকে সমালোচনা থেকে বিরত রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করছে, ইরান এখনও পারমাণবিক বোমা তৈরিতে অগ্রসর হচ্ছে না। তবে এক বছরের মধ্যে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মন্তব্য করেন, 'তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থা হয়ত ভুল বলেছে।'
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ২২৪ জন নিহত এবং ২৫০০'র বেশি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যাননের ভাষ্য অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৯ জন নিহত ও প্রায় ৯০০ জন আহত হয়েছেন। দুই দেশের অধিকাংশ হতাহতই বেসামরিক।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: