
ভূস্বর্গ কাশ্মীরে পর্যটনের মরশুমে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলায় এ পর্যন্ত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার এই আক্রমনের ঘটনা ঘটেছে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পহেলগাঁওতে। সংবাদ সংস্থার খবর, ২৮ জন নিহত হয়েছেন এবং অনেক পর্যটক আহত হয়েছেন । কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
সংবাদ সংস্থা সুত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে পর্যটকদের নিশানা করে একদল বন্দুকধারি এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। পহেলগাঁওতে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে।
পহেলগাঁওয়ের বৈসারণ জায়গাটি নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিতি রয়েছে। যেখানে পর্যটকদের ভিড় ব্যাপক সেখানেই এই হামলা হয়েছে । স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, দুই থেকে তিনজন বন্দুকধারী জংলা পোশাক পরে এসে পহেলগাওয়ের সবুজ, উঁচু তৃণভূমি বৈসারণে ঘোড়ায় চড়া উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। দুর্গম এই অঞ্চলটি তার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের জন্য পরিচিত ।
গুলি চালনার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে গিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশ থেকে টেলিফোনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে দ্রুত সেখানে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, যে জায়গায় এই ঘটনা ঘটেছে সেখানে সহজে গাড়ি যায় না। ফলে সেই জায়গা পর্যন্ত প্রশাসনের পৌঁছতে সময় লেগেছে।
এই হামলাকে "জঘন্য" আখ্যা দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, অবিশ্বাস্যরকম মর্মাহত হবার খবর। এই হামলার অপরাধীরা পশু, অমানুষ এবং অবজ্ঞার যোগ্য। নিন্দার কোনও শব্দই যথেষ্ট নয়। আমি নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই বলে তিনি সমাজ মাধ্যমে এক পোস্ট করেছেন। তিনি তার এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, “আমি স্তব্ধ। নিহতদের সংখ্যা এখনও চূড়ান্ত হয় নি, তাই আমি সেই বিস্তারিত তথ্যে যাব না। পরিস্থিতি স্পষ্ট হলে সরকারিভাবে সংখ্যা জানানো হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপরে সাম্প্রতিক সময়ে সবথেকে বড় এই হামলা।“
কয়েক সপ্তাহ আগেই জম্মু ও কাশ্মীর সফরে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে তিনি উচ্চস্তরীয় বৈঠকে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছিলেন।
হামলার বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে পর্যটকদেরই তোলা কিছু ভিডিও দেখানো হচ্ছে, তা অত্যন্ত বিচলিত করার মতো। ওইসব ভিডিওতেই দেখা গেছে যে হামলার জায়গায় ভারতীয় সেনা সদস্যরা দৌড়িয়ে যাচ্ছে। আবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সম্প্রচারিত আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে বন্দুকধারীরা অমুসলিমদের আলাদা করে চিহ্নিত করছিল।
হামলার পরেই সেখানে সেনাবাহিনী অপারেশন শুরু করেছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আবারও শ্রীনগর গিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। পর্যটকদের সহায়তা করার জন্য একটি বিশেষ হেল্পলাইন খুলেছে প্রশাসন। অন্যদিকে ভারতের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা এই হামলার কড়া নিন্দা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বার্তায় লিখেছেন, “এই জঘন্য ঘটনার পিছনে যারা রয়েছে, তাদের কঠিন শাস্তি হবে। তাদের ছাড়া হবে না।“
বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী লিখেছেন, “জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলায় পর্যটকদের মৃত্যু এবং আরও অনেকের আহত হওয়ার খবর অত্যন্ত নিন্দনীয় ও হৃদয়বিদারক।“
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: