টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুব দেওয়া একটি পর্যটকবাহী ডুবোযান নিখোঁজ হয়েছে। মধ্য আটলান্টিকের গভীর জলরাশিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া ডুবোযান উদ্ধারে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে ।
ব্রিটিশ সংসাবদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, টাইটান নামের ওই টুরিস্ট সাবমেরিনে পাঁচজন আরোহী রয়েছেন। ১৮ জুন, রোববার ডুব দেওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় সাবমারসিবল বা ডুবোযানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পর্যটক প্রতিষ্ঠান ট্যুর অপারেটর ওশানগেট বলেছে, টাইটানে থাকা পাঁচ আরোহীকে উদ্ধারের সম্ভব্য সব পথই তারা খতিয়ে দেখছে। উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নৌবাহিনী এবং গভীর সমুদ্রে কাজ করা বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো।
সাবমেরিনটিতে মাত্র পাঁচজন বসতে পারেন। এর মধ্যে তিনজন পর্যটক। বাকি দুজনের একজন সাবমেরিনের চালক ও অন্য আরেকজন কন্টেন্ট এক্সপার্ট। সমুদ্রতলে অবতরণ ও আরোহণে প্রায় আট ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়।
ওশেনগেট এক্সপিডিশনের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, বর্তমানে তাদের একটি সাবমেরিন সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালে আরও দুটি সাবমেরিন পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
ইংল্যান্ডের নিউ সাউদাম্পটন থেকে ১৯১২ সালে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে প্রথম যাত্রায় বিশাল আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে গিয়েছিল তৎকালীন সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক। এতে দেড় হাজার মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছিল।
ওই ধাক্কায় দুই টুকরো হয়ে যায় টাইটানিক। বর্তমানে এর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে আটলান্টিকের ৩ হাজার ৮০০ মিটার নিচে। ১৯৮৫ সালে ওই ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার পর থেকে বহু সংস্থা এ নিয়ে গবেষণা করেছে।
টাইটানিকের ওই ধ্বংসাবশেষ দেখাতে পর্যটকদের নিয়ে যায় পর্যটন সংস্থা ওশানগেট। সেজন্য তারা ব্যবহার করে কার্বন-ফাইবারের তৈরি ট্রাকের আকারের একটি সাবমারসিবল বা ডুবোযান, যার নাম টাইটান।
খবরে বলা হয়েছে, টাইটানিক দেখার এই যাত্রা ছিল আট দিনের। নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস থেকে যাত্রা করেন পর্যটকরা। মাথাপিছু টিকেটের দাম আড়াই লাখ ডলার। সাধারণত চার দিন চলার মতো অক্সিজেন নিয়ে ডাইভ শুরু করে এই টুরিস্ট সাবমেরিন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগার সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ডুবোযানটির সঙ্গে যখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, তখনও টাইটানে ৭০ থেকে ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেন ছিল বলে তারা মনে করছেন।
রিয়ার অ্যাডমিরাল উদ্ধার তৎপরতা বিষয়ে বলেন, দুটি বিমান, একটি সাবমেরিন এবং সোনার বয়া নিখোঁজ সাবমেরিনটির অনুসন্ধানে জড়িত রয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধান এলাকা তীর থেকে বেশ দূরে হওয়ায় অনুসন্ধান কঠিন হয়ে পড়েছে।
কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস থেকে এই ডুবোজাহাজটি যাত্রা শুরু করেছিল। সাধারণত সাগরের তলদেশে ধ্বংসাবশেষের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসতে আট ঘণ্টার মতো সময় লাগে। ওশেনগেটের তিনটা সাবমার্সিবল থাকলেও টাইটানিকের কাছে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে শুধুমাত্র টাইটানের।
সূত্র : বিবিসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: