
স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানের চারপাশে বড় আকারের সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। দেশটির সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও রকেট বাহিনীর সম্মিলিত এই মহড়াকে তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য ‘কঠোর সতর্কবার্তা’ বলে অভিহিত করেছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকালে শুরু হওয়া এই মহড়ায় চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সেনা, নৌ ও রকেট বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দিক থেকে তাইওয়ানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় এই অঞ্চলের সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা চীনের ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড।
নিজেদের অফিসিয়াল উইচ্যাট (চীনের জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ) সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে পিএলএ জানিয়েছে, আজ থেকে শুরু হওয়া এই সামরিক মহড়ায় সমুদ্র ও আকাশপথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ, বিস্তৃত এলাকা জুড়ে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা, সমুদ্র ও স্থলভাগে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও পথে নিয়ন্ত্রণমূলক অবরোধ আরোপের ওপর জোর দেওয়া হবে।
দেশটির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড আরও জানিয়েছে যে, চীনের কোস্ট গার্ডও তাইওয়ানের মূল ভূখণ্ডের কাছাকাছি অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টহল দিচ্ছে। উল্লেখ্য, চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির একটি বড় কৌশল হচ্ছে কোস্ট গার্ড ও মাছ ধরার ট্রলারের মতো বেসামরিক যানকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করা। প্রয়োজনে তারা সাধারণ বেসামরিক জাহাজগুলোকেও সামরিক কাজে ব্যবহার করে থাকে।
চীনে কোস্ট গার্ডের মুখপাত্র ঝু আনকিং বলেছে, এক-চীন নীতির সাথে সঙ্গতি রেখে দ্বীপটির (তাইওয়ানের) ওপর বৈধ অধিকার প্রয়োগ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন মহড়া সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ।
এদিকে, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টার মধ্যে তারা তাইওয়ানের চারপাশে ১৯টি পিএলএ জাহাজ শনাক্ত করেছে। এগুলোর মধ্যে চীনের বিমানবাহী রণতরী শানডংও রয়েছে। দ্বীপদেশটির সামরিক কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে যে, চীনা জাহাজগুলোর মধ্যে ১০টিরও বেশি তাইওয়ান উপকূল থেকে ২৪ নটিক্যাল মাইল বা ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছিল।
চীনের সামরিক মহড়ার প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই বিমান, নৌবাহিনীর জাহাজ ও উপকূলীয় ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে জানা গেছে।
তাইওয়ানিজ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ওয়েন লি বলেন, চীনের এমন আচরণ ‘ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন ও সামরিক উস্কানি’। তাদের বিস্তৃত এই মহড়া ইঙ্গিত দেয় যে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা শুধু তাইওয়ান দখল করার মধ্যে সীমিত নয়, বরং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে আধিপত্য অর্জনও।
চীন দীর্ঘদিন ধরেই তাইওয়ানকে চীনের অংশ বলে দাবি করে আসছে এবং সামরিক শক্তি ব্যবহার করে দ্বীপ রাষ্ট্রটি দখলে নেওয়ার অভিপ্রায়ের কথাও বহুবার জানিয়েছে। আর চীনের এই দাবি মানতে নারাজ তাইওয়ান। নিজেদেরকে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র দাবি করে চীন সরকারের দাবিকে একাধিকবার নাকচ করেছে তাইওয়ানের শীর্ষ নেতৃত্ব।
এদিকে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তাইওয়ানকে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মাত্র ১২টি দেশ স্বীকৃতি দেয়। তাছাড়া তাইওয়ানের অফিসিয়াল নাম রিপাবলিক অব চায়না, সংক্ষেপে আরওসি। স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চলটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের দ্বারা পরিচালিত এবং তাদের নিজস্ব মুদ্রা ও সামরিক বাহিনী রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: