খার্তুমের দখল নিলো সেনাবাহিনী, জেনারেল বুরহানের বিজয় দাবি

মুনা নিউজ ডেস্ক | ২৮ মার্চ ২০২৫ ০০:৪২

সাম্প্রতিক ছবি সাম্প্রতিক ছবি

সুদানের সেনাবাহিনী দেশটির রাজধানী খার্তুমের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। বুধবার তিনি রাজধানীর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ পরিদর্শন করেন। যা সেনাবাহিনী কয়েক ঘণ্টা আগেই দখলমুক্ত করেছিল। প্রাসাদে জয়ধ্বনি করতে থাকা সেনাদের সামনে দাঁড়িয়ে বুরহান খার্তুমকে প্যারামিলিটারি বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-মুক্ত বলে ঘোষণা দেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

আল-বুরহান বলেন, ‘খার্তুম এখন মুক্ত’। প্রায় দুই বছর যুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো বুরহান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে পা রাখলেন। যুদ্ধ শুরুর পর আরএসএফ রাজধানী দখল করায় সেনাসমর্থিত সরকার বাধ্য হয়েছিল লোহিত সাগর তীরের পোর্ট সুদানে স্থানান্তরিত হতে।

সেনাবাহিনীর একজন কমান্ডার বিবিসিকে জানান, তারা বিমানবন্দর পুরোপুরি সুরক্ষিত করেছে এবং আজকের মধ্যেই বাকি আরএসএফ যোদ্ধাদেরও পরাজিত করতে সক্ষম হবে। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলমুক্ত করার পর থেকে সেনাবাহিনী দ্রুত আরএসএফের কাছ থেকে বিভিন্ন সরকারি ভবন ও স্থাপনা উদ্ধার করছে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই খার্তুমের বেশিরভাগ অংশ আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ যুদ্ধে সারাদেশে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আরও জানান, তারা বৃহত্তর খার্তুমের তিনটি শহরকে সংযুক্তকারী নীল নদের সব সেতু এবং জেবেল আওলিয়ার একটি সামরিক ক্যাম্প পুনর্দখল করেছে, যা আরএসএফের দক্ষিণ খার্তুমের শক্ত ঘাঁটি ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আরএসএফ যোদ্ধারা দক্ষিণ দিকে পিছু হটছে, সম্ভবত জেবেল আওলিয়ার দিকে-যা তাদের একমাত্র অবশিষ্ট পথ।

সেনাবাহিনী প্রকাশিত ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, সেখানে বাঁধের উপর দিয়ে মানুষ পার হচ্ছে। বিবিসি তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি, তবে সেনাবাহিনী দাবি করেছে, এরা খার্তুম থেকে পালিয়ে যাওয়া আরএসএফ যোদ্ধা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, খার্তুমের কিছু বাসিন্দা সেনাবাহিনীর অগ্রগতিতে আনন্দ প্রকাশ করছেন। অনেকেই আরএসএফের দখলদারিত্বকে নিষ্ঠুর বলে বর্ণনা করেছেন। যারা পালাতে পারেননি বা চাননি, তারা আরএসএফের ব্যাপক লুটপাটের কথা জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, লুটপাট ও উভয় পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণে বাধার কারণে খার্তুম এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো যৌন সহিংসতা ও অন্যান্য অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে। আরএসএফ ও সেনাবাহিনী উভয়ই বেসামরিক এলাকায় নির্বিচার গোলাবর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত। গত সপ্তাহে বিমানবাহিনীর হামলায় একটি বাজারে কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

খার্তুম পুনর্দখল সেনাবাহিনীর জন্য একটি বড় কৌশলগত সাফল্য। তবে যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। পশ্চিম সুদানের প্রায় সমগ্র দারফুর অঞ্চল এখনও আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উভয় পক্ষই বিদেশি শক্তির সমর্থন পাচ্ছে, যারা অস্ত্র সরবরাহ করছে। শান্তি আলোচনার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাও এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: