সিরিয়া-লেবাননের মতো উত্তাল মণিপুর

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৯ জুন ২০২৩ ১৮:২৮

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি


জাতিগত দাঙ্গায় কিছুদিন পরপরই অশান্ত হয়ে উঠছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর। সংঘর্ষে নিহত হচ্ছে মানুষ। এমনকি হামলা চালানো হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি ও কর্মকর্তাদের বাড়িঘরেও। হামলা হয়েছে রাজ্যের শাসক দল বিজেপির প্রেসিডেন্ট অধিকারীমায়ুম সারদা দেবীর বাড়িতেও। থংজু বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রধান কার্যালয়ও জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে মণিপুর রাজ্যকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত লিবিয়া, লেবানন এবং সিরিয়ার সাথে তুলনা করে টুইট করেছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা।

মণিপুরের সাবেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল এল নিশিকান্ত সিং এক টুইটে লিখেন, ”আমি মণিপুর থেকে আসা অতি সাধারণ একজন ভারতীয়, বর্তমানে অবসর জীবন কাটাচ্ছি। আমার রাজ্য এখন 'রাষ্ট্রহীন'। লিবিয়া, লেবানন, নাইজেরিয়া, সিরিয়া দেশের মতো এখানেও যে কেউ যখন খুশি জীবন বা সম্পত্তি ধ্বংস করে ফেলতে পারে।”

তিনি আরও লিখেন, মনে হচ্ছে যেন মণিপুরকে নিজের কৃতকর্মের ফল ভোগ করার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কেউ কি শুনছেন?

এই টুইটে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ভেদ মালিক। তিনি মণিপুরের পরিস্থিতিকে দুঃখজনক বলে বর্ণনা করেছেন। টুইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে ট্যাগ করেছেন ভেদ মালিক।

১৫ জুন, বৃহস্পতিবার করা তার টুইটটি ভাইরাল হয়ে যায়। রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে তার টুইট। মণিপুরের সাবেক এই শীর্ষ সেনার টুইটার বায়োতে বলা হয়েছে যে তিনি ৪০ বছর ধরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করেছেন।

এদিকে ১৬ জুন, শুক্রবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর. কে. রঞ্জন সিংয়ের ইম্ফলের বাসভবন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। রাজ্যের আরও বহু বিজেপি নেতা-মন্ত্রীকেও আক্রমণের নিশানা করা হচ্ছে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে নিজের বাড়ি হামলায় ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ার পর প্রকাশ্যেই সে কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর. কে. রঞ্জন সিং।

মণিপুরের পরিস্থিতির জন্য বিজেপির রাজনীতিকে দায়ী করে বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, মণিপুর যে জ্বলছে এবং সেখানে একের পর এক প্রাণহানি হচ্ছে, সেই ব্যর্থতার দায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েন।

গত মাসে মণিপুরে মেইতেই ও নাগা-কুকি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে যে রক্তাক্ত সংঘাত শুরু হয়েছিল তা সাময়িকভাবে থিতিয়ে এলেও গত তিন-চারদিনে তা আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।

১৬ জুন, শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ বিষ্ণপুরের কোয়াকটা শহরে ও চূড়াচাঁদপুর জেলার কাংভাই গ্রামে একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে প্রায় চার-পাঁচশ রাউন্ড ফায়ারিং করলে উত্তেজনা চরমে ওঠে।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, তখন থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে গুলির ঘটনা ঘটেই চলেছে। তারা আরও বলছেন, বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকরা এক এক জায়গায় জড়ো হচ্ছেন এবং তারপর সংঘবদ্ধভাবে সরকারি সম্পত্তি বা নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িতে হামলা চালানোর বা জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস, র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও রাজ্য পুলিশের যৌথ বাহিনী রাজধানী ইম্ফলের রাস্তায় মধ্যরাতেও টহল দিচ্ছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর কে রঞ্জন সিংসহ বহু বিজেপি নেতার বাড়ি ও কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে।

রাজ্যের প্রভাবশালী বিজেপি নেতা এবং বিদ্যুৎ ও বনমন্ত্রী টি বিশ্বজিৎ সিং যে বিধানসভা কেন্দ্রে থেকে জিতে এসেছেন, সেই থংজুতে বিজেপির প্রধান দপ্তরটিও হামলাকারীরা জ্বালিয়ে দিয়েছে।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় রাজ্যের একমাত্র নারী ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও কুকি নেত্রী নেমচা কিপগেনের ইম্ফলের বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ঘটনার সময় তিনি অবশ্য বাড়িতে ছিলেন না।

বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন ধরাতে আসা দুষ্কৃতীদের নিরাপত্তা বাহিনী বাধা দিতে গেলে বহু জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। তাতে বেশ কয়েক জায়গায় বেসামরিক মানুষজন জখমও হয়েছেন।

মণিপুরের এই সংকট শুরু হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত মাসের শেষ দিকে একবারই ওই রাজ্যে সফর করেছেন এবং একটি ‘শান্তি কমিটি’ গঠনের কথাও জানিয়েছেন। কিন্তু সেই কমিটি যে কোনও কাজে আসছে না তা মণিপুরের ঘটনাপ্রবাহ থেকেই স্পষ্ট।

 

সূত্র : বিবিসি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: