
সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারা শুক্রবার দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুসারী আলাউইত বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি তারা আত্মসমর্পণ না করে, তবে কঠোর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।
শুক্রবার সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এক অভিযানে ১৬২ জন আলাউইতকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান ওয়ার মনিটর। দেশটির ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চলে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরই অভিযান পরিচালিত হয়।
টেলিগ্রামে প্রচারিত এক ভাষণে আল-শারা বলেন, তোমরা পুরো জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চরম ভুল করেছো। এর প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যে পেয়েছো। এখনই অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করো, নয়তো পরিণতি ভয়াবহ হবে।
সংঘর্ষ ও নিরাপত্তা অভিযান
সিরিয়ান অবজারভেটরির তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার থেকে দেশটির পশ্চিম উপকূলে শুরু হওয়া সংঘর্ষে ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। কয়েক দিন ধরেই সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে সহিংস ঘটনা ঘটছিল। গত ডিসেম্বরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আকস্মিক অভিযানে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের জন্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল-শারা বলেন, অস্ত্র শুধুমাত্র রাষ্ট্রের হাতেই থাকবে সেটা আমরা নিশ্চিত করবো। আর কোনো অরাজকতা বরদাশত করা হবে না।
গণহত্যা ও নিষ্ঠুর দমন অভিযানের অভিযোগ
যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, শুক্রবার উপকূলীয় অঞ্চলে পাঁচটি পৃথক গণহত্যায় ১৬২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও ছিল। সংস্থাটির দাবি, বেশিরভাগ মানুষকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন।
অবজারভেটরি ও স্থানীয় অধিকারকর্মীদের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, একাধিক মৃতদেহ একটি বাড়ির উঠানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। রক্তের দাগ ছড়িয়ে আছে চারপাশে, আর নারী-শিশুর কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। অন্য কয়েকটি ভিডিওতে সামরিক পোশাক পরিহিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে বন্দীদের গুলি করার দৃশ্য দেখা গেছে।
কারফিউ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
উপকূলীয় লাতাকিয়া ও তারতুস প্রদেশে শনিবার পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। লাতাকিয়া ও তারতুসের মধ্যবর্তী জাবলেহ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। লাতাকিয়া প্রদেশে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য সরকার ‘নাশকতামূলক কার্যক্রম’কে দায়ী করছে। এছাড়া, সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসেও কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রিত বাহিনী আসাদপন্থী মিলিশিয়াদের দমন অভিযানে নেমেছে।
সরকারি এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা সানাকে জানিয়েছেন, এই অভিযান আসাদপন্থী মিলিশিয়া ও তাদের সহযোগীদের নির্মূল করার জন্য চালানো হচ্ছে। নাগরিকদের ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: