কানাডার ওপর নতুন শুল্ক আরোপের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক নীতির প্রতিশোধ নিতেই এ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ট্রুডো বলেছেন, পানীয় থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি; সকল মার্কিন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির প্রতিশোধ নেবে কানাডা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যা তিনি শনিবার থেকে কার্যকর করেছেন। বিশ্বের দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত ভাগ করা দেশের শীর্ষে রয়েছে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে দুই দেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে। কানাডার ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫৫ বিলিয়ন মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রুডো।
এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো বলেন, কানাডা ১৫৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর এ সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকেই শুল্ক আরোপ কার্যকর করবে অটোয়া। বাকি পণ্যেও আগামী ২১ দিনের মধ্যে কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রুডো।
প্রসঙ্গত, কানাডা-মেক্সিকো থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। এছাড়া চীনা পণ্যের ওপরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে বিশ্বে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন ট্রাম্প।
অর্থনীতিবদরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই নীতি বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেবে এবং চরম মাত্রার মুদ্রাস্ফীতির জন্ম দেবে।
আগে থেকেই এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন ট্রুডো। তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ফলে যেমন কানাডার জনগণের ভোগান্তি বাড়তে তেমনি সেটা আমেরিকানদেরও ক্ষতি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের উদ্দেশে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (ট্রাম্প প্রশাসন) তোমাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দেবে, বিশেষ করে মুদি পণ্য এবং গ্যাসের মূল্য বেড়ে যাবে। এছাড়া ট্রাম্পের এই নীতির ফলে সাশ্রয়ী অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় বড়াবে বলেও জানিয়েছেন ট্রুডো।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো বলেন- আমেরিকান বিয়ার, ওয়াইন এবং বোরবনের সঙ্গে ট্রাম্পের নিজ রাজ্য ফ্লোরিডা থেকে আমদানিকৃত কমলার জুসসহ ফলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক, খেলাধুলার সরঞ্জাম এবং গৃহস্থালীর জন্য ব্যবহার্য যন্ত্রপাতিকেও লক্ষ্যবস্তু করবে কানাডা। দেশটির নাগরিকদের মার্কিন পণ্য না কিনে দেশীয় পণ্য কেনার পরামর্শ দিয়েছেন ট্রুডো। তিনি বলেন, এমনটি আমরা চাইনি তবে আমারা পিছু হটব না।
কানাডার পাশাপাশি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেনবাউম ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে তাঁর দেশ। শুল্ক আরোপসহ নিজস্ব অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে এই পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপে চীন ভীষণ অসন্তুষ্ট। তারা দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতির গুরুতর লঙ্ঘন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনুরূপ পাল্টা ব্যবস্থা নেবে চীন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: