কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরার আলোচিত প্রামাণ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি সম্প্রচারিত হলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ওই প্রতিবেদনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার তথ্য তুলে ধরা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার নিষিদ্ধের দাবি তোলে সরকারঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসে আজ রোববার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আল-জাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রচারের পর শেখ হাসিনা সরকার ব্রিটিশ আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়েছিল। ওই প্রামাণ্যচিত্রে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
সানডে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণভবনে শেখ হাসিনার শোয়ার ঘরে পাওয়া একটি জীর্ণ নথি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ডেসমন্ড ব্রাউনি এবং আইনজীবী জেরেমি ক্লার্ক উইলিয়ামসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ব্রাউনি প্রথমে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন একজন বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করতে। এরপর লন্ডনের পেনিংটন মানচেস কুপারের বিশেষজ্ঞ জেরেমি ক্লার্ক উইলিয়ামসের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।
২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন ব্যারিস্টার ডেসমন্ড ব্রাউনি। এরপর ব্রাউনির পরামর্শে লন্ডনের আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পেনিংটন মানচেস কুপারের বিশেষজ্ঞ জেরেমি ক্লার্ক-উইলিয়ামসের সঙ্গে যোগাযোগ করে শেখ হাসিনা সরকার। কিছুদিন পর তিনিও বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রতিনিধিরা ক্লার্ক-উইলিয়ামসকে বলেছিলেন, আল-জাজিরার ওই প্রামাণ্যচিত্রে ‘সারবত্তা তেমন কিছু না থাকলেও’ তা শেখ হাসিনার সুনাম ‘ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন’ করেছে। বাংলাদেশ সরকার বা সেনাবাহিনীর মতো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সেনাপ্রধানের মতো কোনো ব্যক্তি এই প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে আদালতে মানহানির মামলা করবে কি না, সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা যিনি এই প্রামাণ্যচিত্রে নেই, তবে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মানহানি হয়েছে, তাঁর মতো তৃতীয় কোনো পক্ষ মানহানির মামলা করবে কি না, সে বিষয়েও পরামর্শ নিতে বলা হয়েছিল লন্ডন হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের।
এ ছাড়া প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে জড়িত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে বাংলাদেশে এনে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনার কথাও উঠে আসে।
অবশ্য ডেসমন্ড ব্রাউনি এবং জেরেমি ক্লার্ক উইলিয়ামস পরামর্শ দিলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে তারা ফেসবুক এবং ইউটিউব থেকে প্রামাণ্যচিত্রটি সরানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এসব প্ল্যাটফর্ম আল-জাজিরার প্রামাণ্যচিত্র সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেসমন্ড ব্রাউনি সানডে টাইমসকে বলেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন এবং আইনি পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে এরপর আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: