কাজাখস্তানে আজারবাইজান এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার আগে অন্তত একটি ‘জোরালো শব্দ’ শোনা গিয়েছিল। তখন উড়োজাহাজটি এর প্রকৃত গন্তব্য রাশিয়ার দক্ষিণের গ্রোজনি শহরের পথে উড়ছিল।
বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটি থেকে বেঁচে ফেরা দুই যাত্রী ও একজন ক্রু এ কথা জানান।
গত বুধবার কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে উড়োজাহাজটি (ফ্লাইট জে২-৮২৪৩) বিধ্বস্ত হয়। এতে অন্তত ৩৮ জন নিহত হন। বেঁচে যান ২৯ জন। উড়োজাহাজটিতে যাত্রী-ক্রু মিলে ৬৭ জন আরোহী ছিলেন।
ঘন কুয়াশার কারণে উড়োজাহাজটি গ্রোজনিতে অবতরণ করতে পারেনি। পরে পাইলট মাঝ আকাশে সেটি নিয়ে চক্কর দিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই উড়োজাহাজের বাইরের অংশে কিছু একটা ‘আঘাতের জোরালো’ শব্দ শোনা যায়।
জুলফুগার আসাদোভ, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের বেঁচে ফেরা ক্রু
এমব্রায়ার-১৯০ নামের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার গ্রোজনির উদ্দেশে রওনা করেছিল। একপর্যায়ে উড়োজাহাজটিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এ অঞ্চলে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা প্রতিহত করতে ঘনঘন আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করে থাকে রাশিয়া।
‘ওই শব্দ শোনার পর...আমি ভেবেছিলাম, উড়োজাহাজটি ভেঙে পড়বে’, বলেন বেঁচে ফেরা যাত্রী শুভোনকুল রাখিমভ। তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতাল থেকেই কথা বলেন রাখিমভ।
রাখিমভ জানান, জোরালো শব্দ শুনে তিনি প্রার্থনা শুরু করেছিলেন। ভেবেছিলেন, হয়তো মারা যাবেন। তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে, উড়োজাহাজটি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
আরেক যাত্রী ভাফা শাবানোভাও জোরালো শব্দ শোনার দাবি করেন। বলেন, ‘আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।’ শাবানোভা জানান, তিনি দুটি শব্দ শুনেছিলেন। পরে একজন ক্রু তাঁকে উড়োজাহাজের একদম পেছনের দিকে চলে যেতে বলেন।
বেঁচে ফেরা দুই যাত্রী বলেন, জোরালো শব্দ শোনার পরপর উড়োজাহাজটিতে অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল।
বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির ক্রু জুলফুগার আসাদোভ জানান, ঘন কুয়াশার কারণে উড়োজাহাজটি গ্রোজনিতে অবতরণ করতে পারেনি। পরে পাইলট মাঝ আকাশে সেটি নিয়ে চক্কর দিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই উড়োজাহাজের বাইরের অংশে কিছু একটা ‘আঘাতের জোরালো’ শব্দ শোনা যায়।
উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার ভয়াবহতা কাটিয়ে, বেঁচে ফেরা যাত্রী ও ক্রুর এসব বয়ান এ দুর্যোগের পেছনের কারণ সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়।
কাজাখস্তানে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘ভূপাতিত’ করেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ‘প্রাথমিক ইঙ্গিত’ দেখতে পেয়েছে।
দুর্ঘটনার পর আজারবাইজান কর্তৃপক্ষ গতকাল শুক্রবার রাশিয়ার শহরগুলোয় তাদের কয়েকটি উড়োজাহাজের চলাচল বন্ধ রেখেছে। বলেছে, বাইরে থেকে কাঠামোগত ও কারিগরি হস্তক্ষেপের জেরে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে তারা মনে করছে। সেই হস্তক্ষেপ কী—তার বিশদ বিবরণ দেয়নি তারা।
উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা তদন্ত করছে আজারবাইজান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র বৃহস্পতিবার প্রাথমিক অনুসন্ধানের বিষয়ে জানায়, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভুলবশত এটি ‘ভূপাতিত’ করেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, এ ঘটনা নিয়ে চলমান তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা হবে না।
ক্রু জুলফুগার আসাদোভ জানান, উড়োজাহাজটির পাইলটকে সাগরে (কাস্পিয়ান সাগর) অবতরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। পাইলট নিজেই এটা জানিয়েছিলেন। তবে তিনি আকতাউ শহরের দিকে উড়োজাহাজটি উড়িয়ে নেন। তিনি ভূমিতে অবতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পাইলট সতর্ক করে দিয়েছিলেন, উড়োজাহাজটিকে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অবতরণ করাতে হবে। সেই মোতাবেক যাত্রীদের প্রস্তুত করতে বলেছিলেন তিনি—এমনটাই জানান আসাদোভ।
বিধ্বস্ত হওয়ার আগে উড়োজাহাজটির ভেতরে যাত্রীদের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, অক্সিজেন মাস্ক নেমে এসেছে। যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট পরছেন। আরেকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত যাত্রীরা বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে বেরিয়ে আসছেন।
এদিকে, কাজাখস্তানে বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটি রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘ভূপাতিত’ করেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ‘প্রাথমিক ইঙ্গিত’ দেখতে পেয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: