প্রেসিডেন্টের ওই ভাষণের প্রতিক্রিয়ায়, তার শাসকদল পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি)-এর নেতা সাংবাদিকদের বলেছেন যে, ইউনের পক্ষে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করা আর সম্ভব নয়। "তার আগাম পদত্যাগ অনিবার্য," বলেছেন হান ডং-হুন।
সুমবার ইউন তার এক সংক্ষিপ্ত টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন "আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং শোকাহত মানুষদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সামরিক আইন ঘোষণার বিষয়ে, আমি কোনো আইনি বা রাজনৈতিক দায় এড়াবো না।"
অনেকের ধারণা ছিল যে, সামরিক আইন ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট তার প্রথম জাতির উদ্দেশে ভাষণে পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং তিনি বলেছেন যে, পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার দায়িত্ব তিনি তার শাসক দলের উপর ছেড়ে দেবেন। তবে তিনি অভিশংসনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
বিরোধী দল শনিবার ইউনকে অভিশংসনের জন্য দাবি তোলে। এটি পাশ হতে হলে ৩০০ আসনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে।
সংসদে মি.ইউনের দলের সদস্য রয়েছেন ১০৮ জন। অর্থাৎ অভিশংসন করতে হলে প্রেসিডেন্ট ইউনের দলের অন্তত আটজন সদস্যকে অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে হবে।
বিরোধী নেতা লি জে-মিউং বলেছেন, শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ইউনের মন্তব্যে তিনি হতাশ হয়েছেন এবং তার এই ঘোষণা জনসাধারণের ক্ষোভ বাড়বে এবং মানুষ ভাবতে শুরু করবে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে।
লি আরো বলেছেন যে, তিনি প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তার মতে, "বর্তমানে প্রেসিডেন্টের অস্তিত্বই দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।" শুধু রাজনীতিবিদরাই নন, ইউনের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
৫০ বছর বয়সী ইয়াং সুনসিল, সওলের নামদেমুন বাজারে একটি সি-ফুড খাবারের দোকানি। তিনি বলেছেন যে, সামরিক আইন ঘোষণার সময় তিনি ভয় পেয়েছেন এবং তার বিষয়টি অবিশ্বাস্য লাগছিলো।
"প্রেসিডেন্ট হিসাবে ইউনের উপর আমি আমার সব আস্থা হারিয়ে ফেলেছি, আমি মনে করি না যে তিনি আর আমার প্রেসিডেন্ট," তিনি বলেছিলেন।
"আমাদের শেষ অবধি লড়াই করতে হবে, আমরা তাকে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রাখতে দিতে পারি না।"
একই বাজারে ক্রেতা হান জুংমো ছিলেন, যিনি বলেছেন যে ইউনের ক্ষমা চাওয়াই যথেষ্ট নয়। "তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে কিংবা পদত্যাগে রাজি না হলে তাকে অভিশংসিত হতে হবে।"
তিনি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট জনগণের আস্থা ভেঙেছেন।
"যদি তিনি জোর করে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকতে চার তাহলে সেটা খুব হতাশাজনক হবে কারণ আমি বিশ্বাস করি এই প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে শুধু সামরিক আইন ঘোষণাই একমাত্র অপকর্ম নয়।"
মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রেসিডেন্ট ইউন সামরিক আইন ঘোষণা করার পর দক্ষিণ কোরিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়ে যায়।
তিনি "রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি" এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকির কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও শিগগিরই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে তিনি এই পদক্ষেপ কোন বাহ্যিক হুমকি কারণে নেননি বরং নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার কারণেই নিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ইউনের ডিক্রি বাতিল করার জন্য পার্লামেন্টে যোগ দিতে কয়েকজন আইনপ্রণেতা নিরাপত্তা বাহিনীকে পাশ কাটিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপর দিয়ে লাফিয়ে পার হন।
পার্লামেন্ট সদস্যরা যখন ভোট দিয়ে এই ঘোষণা প্রত্যাহার করেন তার ছয় ঘণ্টা পরে ইউন ঘোষণাটি প্রত্যাহার করে নেন। তবে অনেকের উদ্বেগ ছিল যে তিনি দ্বিতীয় ডিক্রি জারির চেষ্টা করবেন।
কয়েকজন আইনপ্রণেতা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সামনে আগে থেকেই ঘোষণা বাতিলের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন।
দেশকে সামরিক শাসনের প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই জনপ্রিয়তার রেটিংয়ে পিছিয়ে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন। দুর্নীতির অভিযোগ এবং একটি বিরোধী দল দ্বারা পরিচালিত আইনসভা তাকে একজন অসমর্থ নেতায় পরিণত করেছিলো।
ফিরে দেখা দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসনের ইতিহাস
কোহ জে-হাক এখনও স্পষ্টভাবে মনে করতে পারেন, সৈন্যরা একদল তরুণীকে তার চোখের সামনে কতোটা নির্মমভাবে গুলি করেছিল। সময়টি ছিল ১৯৬০ সালের এপ্রিল মাস। শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট সিংম্যান রি-এর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছিলো।
কোহ হে হাক তখন একটি সরকারি ভবনে কাজ করতেন। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই তিনি দেখতে পান বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশ সংঘাত চলছে।
"বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীরা এক হয়ে ভবনের সামনে জড়ো হয়েছিল... তখনই তাদের ওপর গুলি চালানো হয়," বলছিলেন ৮৭ বছর বয়সী কোহ হে। ওই ঘটনার কয়েকদিন পর সামরিক আইন জারি করা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়াকে এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, তবে দেশটির পরিস্থিতি সবসময় এমন ছিল না।
এই কারণেই রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওলের চলতি সপ্তাহে সামরিক আইনের ঘোষণা - ৪৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম, তাও আবার গণতান্ত্রিক শাসনকালে এমন একটি ঘোষণা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল এবং মানুষের মনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিলো।
সাথে সাথে আইন প্রণেতারা এই ঘোষণা বাতিল করতে তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির দিকে ছুটে যান।
শত শত সাধারণ মানুষ সৈন্যদের আটকাতে রাস্তায় জড়ো হয়েছিলো। সৈন্যদের নির্দেশ দেয়া ছিল তারা যেন এমপিদের বের করে দেয়।
তবে ধারণা করা হয় কিছু সৈন্য, আদেশ পালন করতে চায়নি। তারা বিক্ষোভকারীদের সরাতে এবং ভবনে প্রবেশে তেমন ভূমিকা রাখেনি বলে রিপোর্ট করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ইউন সামরিক আইন ঘোষণা করার সময় বলেছিলেন যে "উত্তর কোরিয়াপন্থী শক্তিকে নির্মূল করার জন্য প্রয়োজন।
প্রথমে, দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়, তারা মনে করেছিল উত্তর কোরিয়া থেকে একটি সত্যিকারের কোন হুমকি রয়েছে।
কিন্তু যখন তারা টেলিভিশনে প্রচারিত ইউনের ঘোষণা দেখে, অনেকেই মনেই সন্দেহ জাগে। কেননা তিনি এমন কোনো শক্তির প্রমাণ দেননি, এবং তারা কারা সেটাও ব্যাখ্যা করেননি।
যেহেতু ইয়ুন আগেও তার রাজনৈতিক বিরোধীদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে একই ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। তাই সাধারণ মানুষ বুঝে যায় যে তিনি আসলে তার রাজনৈতিক শত্রুদের পরাস্ত করার জন্যই এতকিছু করেছেন।
এর আগে যখন সামরিক আইন জারি করা হয়েছিলো, তখনো নেতারা তার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, দেশের স্থিতিশীলতার জন্যই সেটি করা হচ্ছে।
অনেক সময় এরকম দাবিও করা হয়েছে যে, উত্তর কোরিয়ার কম্যুনিস্ট দুষ্কৃতিকারীদের দমন করার জন্য এরকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব করেছিল। রাতে কারফিউ জারি এবং মানুষকে গ্রেফতারের ঘটনা ছিল সাধারণ বিষয়।
সেই সময় প্রায়ই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো। বিশেষভাবে ১৯৮০ সালের কথা বলতে হয়। ওই বছর দক্ষিণের শহর গাংজুতে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ করছিল শিক্ষার্থীরা। তাদের দমন করতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চান ডু-হুয়ান সামরিক আইনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়।
সে সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর এক নৃশংস সামরিক হামলা চালানো হয়, যাকে পরবর্তীতে গণহত্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১৯৩ বলা হলেও বিশেষজ্ঞদের দাবি ওই সংঘাতে আরো কয়েকশ মানুষ মারা গিয়েছিল।
অবশেষে ১৯৮৮ সালে জনসাধারণের চাপে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথমবারের মতো অবাধ ও সুষ্ঠু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তার ভিত্তিতেই দক্ষিণ কোরিয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
গত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা পুরো জাতিকে স্থায়ী ও গভীরভাবে এসব বিষয়ে সচেতন করে তুলেছে।
"বেশিরভাগ কোরিয়ানদেরই সামরিক আইন নিয়ে ট্রমা, গভীর ট্রমা আছে," বলেছেন ৫৩ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী কেলি কিম, "আমরা চাই না একই জিনিসের বারবার পুনরাবৃত্তি হোক।"
দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বশেষ সামরিক আইন জারির সময় কিম অনেক ছোট ছিলেন এবং এ নিয়ে তার তেমন কোন স্মৃতি নেই। তারপরও সামরিক ফিরে আসছে চিন্তা করলেই তার বুক কেঁপে ওঠে।
"সরকার সব মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে, আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করবে। আমি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। আমাদের মূল কাজ সরকারের সমালোচনা করা, যা কিনা সামরিক আইনের অধীনে সম্ভব হবে না। এটা সত্যিই ভয়ঙ্কর।"
গণতন্ত্রের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীনতা শুধু একটি সমৃদ্ধ নাগরিক সমাজের জন্ম দেয়নি। বরং সেই প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পর থেকে ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে, দক্ষিণ কোরিয়ার সৃজনশীল শিল্পগুলি বিকশিত হয়েছে।
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার নাটক, টিভি শো, সঙ্গীত এবং সাহিত্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছে। সৃজনশীল শিল্পগুলি নিজস্ব লেন্সে দেশের অতীতের দিকে নজর দিয়েছে, এমন ইতিহাস জীবিত করেছে যেগুলি অতীতে জানেনি এমনদের জন্য।
এই সৃজনশীল মাধ্যমগুলো দেশটির অতীতকে সামনে আনার কারণে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। দেশটি তার স্বৈরাচারী শাসন, গোয়াংজু'র বিক্ষোভের মতো ঘটনাগুলো নিয়ে শো তৈরি করেছে।
এর মধ্যে কয়েকটি ইতিহাসভিত্তিক শো ভীষণ হিট হয়। সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার বাঘা বাঘা তারকারা অভিনয় করেন।
যেমন: গত বছরের ১২:১২ দ্য ডে, শীর্ষক ইতিহাসভিত্তিক চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় দক্ষিণ কোরীয় অভিনেতা হোয়াং জং-মিন কাজ করেছেন।
১৯৭৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং-হি হত্যার পর দেশটিতে সামরিক আইন জারি করা হয়। সে সময়কার রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
"যখনই আমি ইয়ুনের সামরিক আইনের ঘোষণার ছবিগুলো দেখলাম, এটা আমাকে সেই সিনেমার কথা মনে করিয়ে দেয়... আমার মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছি?" ৩৭ বছর বয়সী ওয়েব ডিজাইনার মেরিনা কাং বলেন।
"কোরিয়ার কাছে সেই যুগের [চলচ্চিত্র এবং ডকুমেন্টারি] অনেক ভিজ্যুয়াল কাজ রয়েছে। যদিও আমরা এই কাজের মাধ্যমে অতীতের না দেখা অভিজ্ঞতাগুলো অর্জন করেছি... এখনো আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে এ ধরনের ঘটনা আর কখনো ঘটানো ঘটবে না।"
তরুণ নাগরিকদের শঙ্কা আছে যে সেই অতীত পরিস্থিতি আবার ফিরে আসতে পারে। যদিও তারা জানে না সামরিক আইনের অধীনে জীবন কেমন, তারা তাদের বাবা-মা এবং বড়দের থেকে জেনেই সামরিক আইন নিয়ে ভয় পায়।
"যখন আমি প্রথম ইয়ুনের ঘোষণা শুনেছিলাম, আমি শুরুতে খুশিই হয়েছিলাম যে যাক স্কুল থেকে একটি দিন ছুটি পাবো। তবে সেই আনন্দ বেশিক্ষণ টেকেনি। যখনই মনে হয় আমার প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটবে, তখন ভয় পেয়ে যাই। আমি ঘুমোতে পারছিলাম না," বলেন ১৫ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থী কওন হু।
"আমার বাবা চিন্তিত ছিলেন যে সামরিক আইনের অধীনে তিনি রাতে বাইরে থাকতে পারবেন না, যদিও তার কাজের জন্য তিনি তা প্রয়োজনীয় মনে করেন... যখন তিনি আবার কারফিউ হতে পারে এমন আশঙ্কার খবর শুনলেন, তিনি খবর দেখে গালি দিতে শুরু করেন।"
"বড় সংখ্যক কোরীয়রা গণতন্ত্রকে ভীষণ মূল্যায়ন করে এবং যুদ্ধ পরবর্তী স্বৈরশাসন নিয়ে অনুতপ্ত বোধ করে," বলেছেন হাংকুক ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেসন রিচি।
তিনি আরো বলেন, " স্বৈরাচারী অতীতের বিভিন্ন দমনমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে দেশ এখনো বিভক্ত রয়ে গেছে বিশেষ করে কমিউনিস্ট বিদ্রোহ প্রতিরোধের জন্য কিছু দমনমূলক ব্যবস্থা নেয়া কতটুকু ন্যায়সঙ্গত ছিল, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।"
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বিশেষ করে বয়স্ক লোকদের মধ্যে এই মত রয়েছে যে, স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের জন্য অতীতে সামরিক আইন আবশ্যক ছিল।
"তখন এমন এক সময় ছিল যা গণতন্ত্র এবং কমিউনিস্ট সমাজতন্ত্রের মধ্যে আদর্শিক যুদ্ধ দ্বারা সংজ্ঞায়িত ছিল," বলেছিলেন কাং হিউ-সান, ৮৩। তিনি গোয়াংওয়ামুনের একটি ক্যাফেতে তার বন্ধু কোহের পাশে বসেছিলেন, যা সওলের প্রধান চত্বর এবং শহরের প্রতিবাদ সমাবেশের কেন্দ্র।
বিপরীত আদর্শগুলি সংঘাতে রূপ হতো এবং "যখন সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করত, পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে উঠত... এটি ছিল শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করার একটি প্রক্রিয়া যাতে সঠিকভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
সিউলে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বাইরে উজ্জ্বল হলুদ ভেস্ট পরা পুলিশ অফিসাররা পাহারা দিচ্ছেছবির উৎস,EPA
ছবির ক্যাপশান,সিউলে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বাইরে উজ্জ্বল হলুদ ভেস্ট পরা পুলিশ অফিসাররা পাহারা দিচ্ছে
"তবে পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমাদের কাছে এটি ইতিবাচকভাবে দেখা ছাড়া আর উপায় ছিল না," তিনি বলেন।
তিনি মনে করেন, "প্রতিটি সামরিক আইন পর্ব দেশকে "আরো অনুকূল" অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন অন্য দেশগুলোর থেকে আলাদা। দেশটিতে সামরিক আইন মানেই হত্যাকাণ্ড বা অযথা সংঘাত ছিল না"।
কিন্তু এবারের বিষয়টি আলাদা। এই দুই বয়স্ক ব্যক্তিই মনে করেন যে প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের সামরিক আইন ঘোষণা অগ্রহণযোগ্য।
"যদিও আমরা আমাদের জীবনে বহু বার সামরিক আইন দেখেছি, এবার তার এই সামরিক আইন ঘোষণার পেছনে কোনো যৌক্তিকতা ছিল না," বলেন কোহ।
তাদের মতো, পরিবেশকর্মী কিমও আনন্দিত যে ইয়ুন সফল হননি এবং গণতন্ত্র অবশেষে বিজয়ী হয়েছে। "কারণ আমরা গণতন্ত্র পেতে কঠিন লড়াই করেছি, তাই না? আমরা আর এটি হারাতে চাই না।
"গণতন্ত্র এবং জীবনযাপনের স্বাধীনতা ছাড়া, জীবন কী?"
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: