পাকিস্তানে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই পুলিশ সদস্য ও চার রেঞ্জার্স কর্মী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শতাধিক পুলিশসহ আহত হয়েছে বহু মানুষ। ২৬ নভেম্বর, মঙ্গলবার কর্মকর্তারা এবং ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
সংসদে পদযাত্রা ও মুক্তির দাবিতে ইমরান খানের অবস্থান কর্মসূচির আহ্বান জানানোর পর গত দুই দিন ধরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদ। দেশজুড়ে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সব বাধা উপেক্ষা করে সোমবার ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায় পিটিআই নেতা-কর্মীদের গাড়িবহর। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। এছাড়া পাঞ্জাব প্রদেশের বিভিন্ন স্থানেও সংঘর্ষ হয়।
প্রাদেশিক পুলিশ প্রধান উসমান আনোয়ার জানিয়েছেন, সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। অন্তত ১১৯ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন কর্মকর্তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া ২২টি পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
নিরাপত্তা সূত্রে জানা গেছে, শ্রীনগর মহাসড়কে কিছু দুষ্কৃতকারী রেঞ্জার্স কর্মীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছে। এতে রেঞ্জার্স কর্মীসহ কয়েকজন হতাহত হয়েছে।
পিটিআই জানিয়েছে, মিছিলে তাদের অনেক কর্মীও আহত হয়েছেন। বিক্ষোভ থেকে পিটিআইয়ের পাঁচ পার্লামেন্ট সদস্যসহ প্রায় চার হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে উত্তাল ইসলামাবাদে সংবিধানের ২৪৫ ধারা সক্রিয় করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি অশান্ত করার যেকোনো চেষ্টা ও জঙ্গি তৎপরতা কঠোর হাতে দমন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাওয়ালপিন্ডিতে কনস্টেবল মুহাম্মদ মোবাশিরের জানাজার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি বলেছেন, পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
বর্তমান বিক্ষোভকে ‘চূড়ান্ত ডাক’ বলে অভিহিত করেছেন ইমরান খান। পিটিআই জানিয়েছে, এটি তার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত অনেকগুলোর মধ্যে একটি। গত বছরের আগস্টে তিনি কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্ডাপুরের নেতৃত্বে একটি মিছিল সোমবার রাতে ইসলামাবাদের বাইরে পৌঁছায়।ইসলামাবাদের ডি চকে জমায়েত হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশি বাধায় তারা শহরে ডুকতে পারেননি।
পিটিআই নেতা আসিম আরবাব বলেছেন, ঠান্ডার মধ্যে তাদের এই পদযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকার ইসলামাবাদের প্রধান সড়ক ও রাস্তা কন্টেইনার দিয়ে বন্ধ করেছে এবং দাঙ্গা দমন সরঞ্জামে সজ্জিত পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে আন্তঃনগর পরিবহন ও টার্মিনালগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জমায়েত।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজা মোহাম্মদ আসিফ জিও নিউজ টিভিকে বলেছেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে সরকার পিটিআই নেতাদের সাথে আলোচনার চেষ্টা করেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: