এবার ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিল নিকারাগুয়া

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১২ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৩৫

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

লাতিন আমেরিকার দেশ কলাম্বিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এবার আরেক দেশ নিকারাগুয়াও সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। গাজায় আগ্রাসনের পর থেকে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা ক্রমেই বাড়ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার নিকারাগুয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজারিও মুরিলো আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যমে দেওয়া ভাষণে তিনি জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তাঁর দেশের পার্লামেন্ট কংগ্রেস এরই মধ্যে একটি রেজ্যুলেশন পাস করেছে। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের এক বছর পূর্ণ হওয়ার কয়েক দিন পর এই ঘোষণা এল।

রোজারিও মুরিলো নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগার স্ত্রী। তিনি জানান, ইসরায়েলের ফ্যাসিবাদী ও গণহত্যাকারী সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে তাঁর স্বামী সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও এই সিদ্ধান্ত এই ধরনের প্রতীকী সিদ্ধান্ত। কারণ, নিকারাগুয়ায় ইসরায়েলের কোনো দূতাবাস বা কূটনৈতিক মিশন নেই এবং দুই দেশের মধ্যে সেই অর্থে সম্পর্ক নেই বললেই চলে।

তবে এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এল যখন, ইসরায়েল গাজা ও লেবাননে নির্বিচার আগ্রাসনের কারণে বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখোমুখি হয়েছে। এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে আরও প্রায় ৯৮ হাজার। এ ছাড়া, লেবাননেও ২ হাজারে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে ইসরায়েলের আগ্রাসনে।

লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশেই বামপন্থী নেতারা ক্ষমতায়। যারা শুরু থেকেই গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার আগ্রাসনের সমালোচনা করে আসছেন। বিশেষ করে ব্রাজিল, কলাম্বিয়া ও চিলির প্রেসিডেন্টেরা ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করেছেন। এ ছাড়া, গত সপ্তাহে ইসরায়েল জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে পারসোনা নন-গ্রাটা বা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এরপর এই তিন দেশ গুতেরেসকে সমর্থন করে চিঠিও লেখে।

এর আগে, গত ১ মে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। মূলত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে এই বিষয়টি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তিনি।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ চালানোর অভিযোগ তুলে তেলআবিব থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে লাতিন আমেরিকার দুই দেশ চিলি ও কলম্বিয়া। সে সময়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন প্রেসিডেন্ট পেত্রো। সে সময় ইসরায়েলে নিযুক্ত কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ শেয়ার করা এক টুইটে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল যদি ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর গণহত্যা বন্ধ না করে, আমরা সেখানে থাকতে পারব না।’

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ইস্যুতে দেশটির সঙ্গে প্রথম দেশ হিসেবে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়া। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রেডি মামানি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বলিভিয়া গাজা উপত্যকায় সংঘটিত আক্রমণাত্মক ও অগ্রহণযোগ্য ইসরায়েলি সামরিক আক্রমণ নিন্দাভরে প্রত্যাখ্যান করছে এবং ইসরায়েলি রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

গাজায় যুদ্ধের জেরে ২০০৯ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল বলিভিয়া। এরপর ২০২০ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের সমালোচক বলিভিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতায় এখন প্রেসিডেন্ট লুইস আর্স। গত সোমবার বলিভিয়ায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইলালওয়ানির সঙ্গে বৈঠকের পর ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন আর্স।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: