একযোগে চাকরি ছাড়ার হুমকি দিয়েছে একদল ইসরায়েলী সেনা

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১০ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৩১

ফাইল ছবি ফাইল ছবি

গাজায় ইসরায়েলি হামলার এক বছর পেরিয়ে গেছে। তবে এখনো উপত্যাকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসকে নির্মূলের নামে এ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে একযোগে চাকরি ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন একদল ইসরায়েলি সেনা।

০৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক এক প্রতিবেদেনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি সফল না হলে একযোগে ইসরায়েলের ১৩০ সেনা চাকরি ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। বুধবার তারা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন।

ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, চিঠিতে ইসরায়েলের ১৩০ সেনা স্বাক্ষর করেছেন। তারা জানিয়েছেন যে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি সফল না হলে আর সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন না। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার সদস্য ও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধানকে উদ্দেশ্যে করে তারা এ চিঠি লিখেছেন।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ইউনিটের রিজার্ভ ফোর্স ও নিয়মিত সেনারা রয়েছেন। তাদের মধ্যে আর্মার্ড কর্পস, আর্টিলারি কর্পস, হোম ফ্রন্ট কমান্ড, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন।

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের বিরোধিতা করে তারা বলেন, এ সংঘাত বন্দিদের মুক্তিকে বিলম্বিত করছে। এ ছাড়া এটি তাদের জীবনের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। কেননা আইডিএফের হামলায় অনেক জিম্মি নিহত হয়েছেন। সামরিক অভিযানে তাদের রক্ষা করার পরিবর্তে তাদের অনেকে মারা গেছেন।

তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকার জিম্মিদের বিনিময়ের চুক্তির দিকে না আগালে আমরা যোগদান করব না। আমাদের মধ্যে কয়েকজনের ইতোমধ্যে রেড লাইন পার হয়ে গেছে। এছাড়া অন্যদেরও সেই সময় দ্রুত চলে আসছে।

এর আগে গাজায় যুদ্ধের বর্ষপূতি উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় হামাসের সামরিক মুখপাত্র আবু উবায়দা বলেন, যখন জিম্মিদের কথা আসে– আমি দখলদারদের এবং জিম্মিদের পরিবারকে বলতে চাই, আপনারা এক বছর আগে সমস্ত জিম্মিকে জীবিত মুক্ত করতে পারতেন। কিন্তু নেতানিয়াহুর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সবসময় জিম্মিদের বিরুদ্ধে এবং জিম্মিদের পরিবারের বিরুদ্ধে ছিল।

হামাসের এ মুখপাত্র বলেন, আমরা প্রথম দিন থেকেই জিম্মিদের নিরাপদ স্থানে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ আমরা আমাদের ধর্মের নিয়ম এবং মানবতার নিয়ম মেনে চলি। বন্দি বিনিময়ের জন্য আমরা তাদের নিরাপদ স্থানে রেখেছি। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাতদিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন।

অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ৯০৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯৭ হাজার ৩০৩ জন।

গত এক বছর ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েল অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির এ হামলায় গাজা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যা পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এ জন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।

জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিসরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।

ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে

গাজাভিত্তিক জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গত সপ্তাহে গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘অবকাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি করা হয়েছে, তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ভবনও নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: