অরুণাচল সীমান্তে হেলিপোর্ট নির্মাণ করছে চীন, চাপে ভারত

মুনা নিউজ ডেস্ক | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৪

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অরুণাচল প্রদেশের সংবেদনশীল ‘ফিশটেইলস’ অঞ্চলের কাছে নুতন একটি হেলিপোর্ট নির্মাণ করছে চীন। এটি উভয় দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে তৈরি করা হচ্ছে। ভারতের অনুন্নত ও প্রত্যন্ত এই অঞ্চল বরাবর চীনা সীমান্তের কাছে একবার এই বিমানবন্দর নির্মিত হলে, সেখানে খুব সহজেই দ্রুত সামরিক কার্যকলাপ পরিচালনা করতে সক্ষম হবে চীনা সশস্ত্র বাহিনী।

এমনটি হলে অরুণাচল নিয়ে ভারত সরকার নতুন করে চাপের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপগ্রহচিত্রের বরাতে ১৮ সেপ্টেম্বর, বুধবার এ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এই খবর জানিয়েছে।

চীনের নতুন এই বিমানবন্দরটি তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নিংচি প্রিফেকচারে গোংরিগাবু চু নদীর তীরে তৈরি হচ্ছে। ওই এলাকাটি চীনা ভূখণ্ডের মধ্যেই পড়ে, যেটি নিয়ে ভারতের কোনও দাবি নেই। নির্মাণাধীন বিমানবন্দরটির একটি ছবি প্রকাশ করেছে এনডিটিভি।

ইওএন ডেটা অ্যানালিটিক্সে পাওয়া ওপেন-সোর্স উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেখানে হেলিপোর্টটি নির্মিত হচ্ছে সে স্থানে ২০২৩ সালে ১ ডিসেম্বর পর্যন্তও কোনও স্থাপনা ছিল না। তবে ৩১ ডিসেম্বর পরবর্তী একটি উপগ্রহ চিত্রে জমিটিকে নির্মাণের জন্য খালি করা হচ্ছে বলে দেখায়। সম্প্রতি, ১৬ সেপ্টেম্বর ম্যাক্সারের হাই-রেজোল্যুশন চিত্রগুলোতে দেখা যায়, হেলিপোর্টটি নির্মাণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

ভূ-স্থানীয় গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ ড্যামিয়েন সাইমন প্রথম হেলিপোর্টের অস্তিত্বের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘নতুন এই হেলিপোর্টের মাধ্যমে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করতে পারবে।’

তিনি বলেন, ঘন জঙ্গল ও এবড়োথেবড়ো পাহাড়ের কারণে এই অঞ্চলে সামরিক রসদ আনা-নেয়া কঠিন। তবে একবার এই হেলিপোর্ট নির্মিত হয়ে গেলে দূরবর্তী অঞ্চলে দ্রুত সেনা মোতায়েন, টহল দক্ষতা জোরদার এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও দূরবর্তী অবস্থানে সামগ্রিক সামরিক পদচিহ্ন জোরদার করতে পারবে চীন।

হেলিপোর্টের নির্মাণের ওপর নজরদারি করছে এমন সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, অবশ্যই সেখানে একটি সামরিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এই হেলিপোর্টের দ্বৈত ব্যবহার হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসামরিক মানুষের চলাচল নিশ্চিত হতে পারে। এতে ‘চীনা প্রতিরক্ষামূলক ও আক্রমণাত্মক অভিযান এবং তাদের জবাব দেয়ার’ সক্ষমতা বাড়বে। আপৎকালীন সময়ে দ্রুত সেনা জড়ো করতে পারবে দেশটি।

অরুণাচল প্রদেশের ফিশটেল এলাকাটি এই অঞ্চলের সীমানা-রেখার স্বতন্ত্র আকৃতির নামানুসারে রাখা হয়েছে। এটি ফিশটেল ১ ও ফিশটেল ২ এর সমন্বয়ে গঠিত। ফিশটেল ১ দিবাং উপত্যকায় এবং ফিশটেল ২ আংশিকভাবে রাজ্যটির আনজাও জেলায় অবস্থিত। উভয় এলাকাকে ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্য কথায়, এটি এমন অঞ্চল যেখানে চীন ও ভারতের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা রয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রভিন বক্সী বলেছেন, ‘এই হেলিপোর্টটি গুরুত্বপূর্ণ ও ‘সংবেদনশীল’ এলাকাগুলোর জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। তিনি আরও বলেন, “আমি গুরুত্বসহকারে এর নোট নেব এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে একটি উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া সাজানোর চেষ্টা করবো, যাতে কার্যকরভাবে এখানে চীনদের তৈরি করা যেকোনও ‘গ্রে-জোন’ যুদ্ধ প্রতিরোধ করা যায়।”

‘গ্রে-জোন’ যুদ্ধ বলতে এমন এক ধরনের সংঘাতকে বোঝায়, যা সাধারণত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ ও শান্তির মধ্যবর্তী অবস্থা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: