ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রায় এক বছর ধরে অনবরত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। যেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে দুনিয়ার অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। আর এসব অস্ত্রের আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। গত ৭ অক্টোবর থেকে চালানো হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
ইসরায়েল যেসব অস্ত্র দিয়ে গাজার নিরপরাধ মানুষের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে তার অধিকাংশই ইসরায়েলে তৈরি নয়। বরং এসব অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বেশকিছু দেশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখেও তেলআবিবকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করেনি তারা।
ইসরাইল বিশ্বের একটি বড় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। তবে আকাশপথে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে তাদের সামরিক বাহিনী আমদানি করা যুদ্ধবিমান, গাইডেড বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। গাজায় ইসরাইল আকাশপথে যে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, বিশেষজ্ঞরা তাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম তীব্র ও ধ্বংসযজ্ঞ বলে উল্লেখ করেছেন।
বিভিন্ন অধিকার গোষ্ঠী ও ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর কিছু রাজনীতিবিদ বলেছেন, দেশটির কাছে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করা উচিত। কারণ, ইসরাইল বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষাসহ তাদের কাছে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিতে বাধা দিচ্ছে।
জানা গেছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ব্যবহৃত বেশিরভাগ অস্ত্রের জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্য। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। প্রযুক্তিগতভাবে বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে ইসরায়েলকে আগাগোড়াই সাহায্য করে আসছে ওয়াশিংটন।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরাইলের প্রধান প্রচলিত অস্ত্র আমদানির ৬৯ শতাংশই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
যুক্তরাষ্ট্র ১০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তির আওতায় ইসরাইলকে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য ইসরাইলকে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে গুণগত সামরিক শক্তিতে এগিয়ে রাখা।
গণমাধ্যম গত মার্চে জানায়, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তখন পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন চুপিসারে ইসরাইলের কাছে ১০০টির বেশি ধাপে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর মূল্য ডলারের হিসেবে এমন পরিমাণ ছিল, যে ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর দরকার হয় না।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পর ইসরায়েলে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করে জার্মানি। এসআইপিআরআইয়ের তথ্য মতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েল যে অস্ত্র আমদানি করেছে, তার ৩০ শতাংশ জার্মানির। আর এ তালিকায় ৩য় অবস্থানে আছে ইতালি। তবে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েল যত অস্ত্র আমদানি করেছে, তার মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ ইতালির বলে জানা গেছে।
তালিকায় ৪র্থ অবস্থানে যুক্তরাজ্যের নাম। দেশটি ইসরায়েলকে যেসব সামরিক সরঞ্জামের জোগান দিচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে সামরিক বিমান, সামরিক যান ও যুদ্ধ নৌযানের উপাদান। তবে চলতি সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানে ব্যবহৃত হয়—এমন সামগ্রীর জন্য দেওয়া প্রায় ৩০টি রপ্তানি লাইসেন্স অবিলম্বে স্থগিত করার ঘোষণা দেন।
পশ্চিমা দেশগুলোর নিয়মিত অস্ত্রের জোগান ছাড়াও ইসরাইলে অবস্থিত অস্ত্র ভাণ্ডার থেকে অস্ত্র পেয়েছে ইসরায়েল। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর একই ভাণ্ডার থেকে ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে।
১৯৮৪ সালে ইসরাইলে অস্ত্রের একটি বড় ভাণ্ডার স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। আঞ্চলিক সংঘাতের সময় যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থানরত সেনাদের দ্রুত এখান থেকে অস্ত্র সরবরাহ করা যায়, সে জন্যই ভাণ্ডারটি স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতিতে ইসরাইলকে দ্রুত অস্ত্র দেওয়াটাও এই ভাণ্ডার স্থাপনের একটি উদ্দেশ্য।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: