দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ভারতে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী রেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯০০ জন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উড়িষ্যার বালেশ্বরে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় তিনটি ট্রেনের নাম জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে দুটি যাত্রীবাহী, অপরটি মালবাহী ট্রেন। দুর্ঘটনায় লাইনচ্যুত একাধিক বগি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। কয়েক মিনিটে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনা সিগন্যালে ত্রুটির কারণে হয়েছে বলে রেলের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, তদন্তের পরে রেলের প্রাথমিক রিপোর্টে করমণ্ডল দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সিগন্যালে ত্রুটির দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে। তবে বিস্তারিত তদন্তে দুর্ঘটনার কারণ আরও স্পষ্ট হবে বলে রেলের কর্মকর্তাদের একাংশের বক্তব্য।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর এক যৌথ রিপোর্টে বলা হয়েছে, আপ মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি সেই লাইনে ঢোকেইনি। ট্রেন ঢুকেছিল লুপ লাইনে। সেখানে আগে থেকে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তার সঙ্গে সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, এর মধ্যে ডাউন লাইন দিয়ে বালেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনেরও দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। কিন্তু মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া সত্ত্বেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস কীভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এক্ষেত্রে সিগন্যাল দেওয়ায় কোনও ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, বাহানগর বাজার স্টেশনে মেইন লাইন দিয়ে না ঢুকে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে। আর লুপ লাইনে আগে থেকে একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল।
রেল মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, এরপর ঘণ্টায় ১২৭ কিলোমিটার বেগে চলা করমণ্ডল এক্সপ্রেস ওই মালবাহী ট্রেনে ধাক্কা দেয় এবং মেইন লাইনে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিপরীত দিক থেকে আসা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ধাক্কা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, সরকারিভাবে উদ্ধারকাজ শেষ বলে ঘোষণা করা হলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা শনিবার বিকালেও ধ্বংসস্তূপে ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহাংশ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে এখনও চাপা পড়ে থাকতে পারেন বলেও তাদের আশঙ্কা।
ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ শনিবার দুপুরেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধারকাজ শেষ এবং বগি সরানো ও ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামতের কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই কাজ শেষ হতে হতে মঙ্গলবার লেগে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।
সূত্র : আনন্দবাজার / হিন্দুস্তান টাইমস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: