ভারতের হিন্দু রক্ষা দল (এইচআরডি) গাজিয়াবাদের গুলধর রেলস্টেশনের কাছে বসবাসকারী বেশ কয়েকটি মুসলিম শ্রমিক পরিবারের ওপর হামলা করেছে। শুক্রবার ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় ডানপন্থী সংগঠনটি ওই পরিবারগুলোকে বাংলাদেশি অভিযুক্ত করে হামলা চালায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। এরপর এইচআরডির দুই নেতা ওই এলাকার মুসলমানদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। ১০ আগস্ট শনিবার দেশটির পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার গাজিয়াবাদের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এই ঘটনায় দুই মূল অভিযুক্ত এইচআরডি দলের প্রধান ভূপেন্দ্র তোমর ওরফে পিঙ্কি চৌধুরী এবং বাদল ওরফে হরি ওমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মধুবন বাপুধাম থানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকায় প্রায় ১০০-১৫০টি মুসলমান পরিবারের বসতি রয়েছে।
কবিনগর সার্কেলের সহকারী পুলিশ কমিশনার অভিষেক শ্রীবাস্তব বলেন, ‘মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। হামলার শিকাররা মুসলিম পরিবার, কিন্তু তাঁদের কেউই বাংলাদেশের নয়। পিংকি চৌধুরীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’
ভুক্তভোগীদের প্রতিবেশী লোচো দেবী বলেন, ‘প্রায় ৩০ জন লোক এসে চার-পাঁচটি পরিবারের ওপর হামলা শুরু করে, তারা তাঁদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে অভিযোগ করে। আক্রমণের শিকাররা শাহজাহানপুর এলাকার মুসলমান ছিল, তাঁদের মালামাল পুড়ে গেছে। মেয়ে ও নারীদেরও মারধর এবং দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলে, ‘আমরা তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। হামলাকারীরা মারধরের পর আগুন দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে অনেক দেরিতে পুলিশ আসে।’
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এইচআরডির প্রধানের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন ওই এলাকায় বসবাসকারী মুসলমানদের ঝুপড়িতে ঘরে আক্রমণ ও ভাঙচুর করে। হামলার সময় তারা পরিবারগুলোকে বাংলাদেশি বলে অভিযোগ করে। তারা তিন থেকে চারটি ঝুপড়িতে হামলা করেছে।
এইচআরডি প্রধান চৌধুরীও সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলার ঘটনা লাইভ করেছেন।
চৌধুরী এইচটি কে বলেন, ‘আমার সঙ্গে এইচআরডি সদস্যরা এই ঘটনায় জড়িত ছিল। আমরা হামলার সম্পূর্ণ দায় স্বীকার করছি। আমরা আরও জানি যে পুলিশ একটি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে এবং একটি অনুলিপি আমাদের কাছে আছে।’
২০১৪ সালে কৌশাম্বিতে আম আদমি পার্টির অফিসে হামলার চালিয়ে পরিচিতি পান চৌধুরী এবং তাঁর দল। ২০১৬ সালে তিনি গাজিয়াবাদ মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং চতুর্থ হন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহিংসতার দায় স্বীকার করে তাঁর দল আবার খবরে আসে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: